রাজনীতি

এমপিদের ‘আমলনামা’ দেখেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখনো নির্বাচনে আসা না আসার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তবে বিএনপির অবস্থান যাই হোক, নির্বাচনের বিষয়ে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন জোট। বিএনপি অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি।

Advertisement

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে থাকা কারও দায় নেবে না আওয়ামী লীগ। মানুষের কাছে যেতে হবে প্রার্থীদের। ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে হবে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও দলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে।

আরও পড়ুন: সিটি ভোটে সংসদ নির্বাচনের ‘মডেল’ খুঁজছে আওয়ামী লীগ 

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কতগুলো নিয়ম আছে। কোথায় কার কী অবস্থা, আমরা ছয় মাস পর পর জরিপ করি। এমপিদের অবস্থা বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থা, তাদের কী কাজকর্ম তার একটি হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সঙ্গে নির্ভর করে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া। এজন্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বিবেচনায় থাকে- কাকে মনোনয়ন দিলে ওই আসনটা আমরা পাবো।’

Advertisement

 

জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে থাকা কারও দায় নেবে না আওয়ামী লীগ। মানুষের কাছে যেতে হবে প্রার্থীদের। ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে হবে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার উদ্যোগ নিতে হবে।

 

আরেক সভায় দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এলাকায় কোনো দলাদলি করা যাবে না। মনোনয়ন দেবো আমি। যারা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, সবাই এলাকায় একসঙ্গে কাজ করবেন। কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া যাবে না।’

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের চেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন আর কোন দেশে হয়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর 

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের। সবার কাছে প্রশ্ন ছিল- সবসময় বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে এমপিদের আমলনামা নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজ, জনসম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় দেওয়া হবে মনোনয়ন। কিন্তু গত দুই নির্বাচনে অল্প কয়েকজন বাদে বা জোটের কয়েকটি আসন ছাড়া মনোনয়নে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। সামনেও কি সেরকম হবে? মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে বা কেমন?

Advertisement

 

মনোনয়নের ব্যাপার একান্তই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে জরিপ করান তিনি। এছাড়া দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট নেন। একই সঙ্গে নিজেও খোঁজ-খবর নেন।

 

জবাবে বেশিরভাগ নেতাই বলেন, মনোনয়নের ব্যাপার একান্তই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে জরিপ করান তিনি। এছাড়া দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট নেন। নিজেও খোঁজ-খবর নেন। পাশাপাশি পুরোনো নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় দলীয় প্রধানের। সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: নির্বাচন বর্জনের মধ্যেও ৫ সিটিতে জয়ী বিএনপির বহিষ্কৃত ৩৬ প্রার্থী 

আওয়ামী লীগের এসব নেতা মনে করেন, বিএনপিসহ সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে জরিপ। চ্যালেঞ্জিং এ নির্বাচনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সারাদেশে আসনগুলোতে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে চলছে জরিপ। বরাবরের মতো সামনের নির্বাচনেও জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেবে আওয়ামী লীগ।’

 

নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার আনা ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সবশেষ কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি মোটেই সুখকর নয়। সবশেষ ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ।

 

গত দুই নির্বাচনে মনোনয়নে তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। সে সময়ও বলা হয়েছিল বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে ওপর নির্ভর করে দেওয়া হবে মনোনয়ন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তখন হয়তো রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে এসেছে। তিনি জনপ্রিয় বা তার অবস্থান তুলনামূলক ভালো ছিল।’

আরও পড়ুন: নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন 

বেশ কয়েকবছর ধরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবিলা করতে হয়েছে নৌকার প্রার্থীদের। কয়েক বছর ধরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহীদের কখনো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বারবার। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিষয়ে দলের অবস্থান নমনীয় হতে পারে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে কিছু আসনে বিদ্রোহীদের ‘ছাড়’ দেওয়া হতে পারে বলেও জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান।

তবে প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানের সঙ্গে একমত নন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। বিদ্রোহীদের বিষয়ে নমনীয়তার সুযোগ নেই জানিয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিএনপিসহ অনেক দল নির্বাচনে আসবে।’

কেন্দ্রে ভোটার আনা বড় চ্যালেঞ্জ ক্ষমতাসীনদের জন্য/ ছবি- জাগো নিউজ

দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘মনোনয়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্য থেকে যার দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা আছে, যার বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগ নেই- এমন জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা মনোনয়নে প্রাধান্য পাবেন।’

আরও পড়ুন: কথা পরিষ্কার, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয় 

একই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগেও মাঠ জরিপ হয়েছে। এখনো একাধিক জরিপ চলছে। জরিপে যারা ভালো করবেন তারাই মনোনয়ন পাবেন। এবারের চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।’

শুধু জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই নয়, আগামী নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার আনাও ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, সবশেষ কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি মোটেই সুখকর নয়। সবশেষ দুই উপ-নির্বাচনের মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে ভোট পড়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ অবস্থায় কেন্দ্রে ভোটার টানতে নানা কৌশল নির্ধারণ করে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে সারাদেশ থেকে মনোনীত ১০০ মাস্টার ট্রেইনার বা প্রশিক্ষককে দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ। পরবর্তী পর্যায়ের অন্য নির্বাচনী প্রচারণা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন এসব প্রশিক্ষক। পাশাপাশি প্রতি আসনে ১০০ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারণায় যুক্ত হচ্ছেন আরও এক লাখ সাইবার যোদ্ধা। এসব কিছুর মূল লক্ষ্য একটাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফের ক্ষমতায় আসা।

এসইউজে/কেএসআর/এসএইচএস/জিকেএস