পঞ্চগড়ের বোদায় ভয়াবহ নৌকাডুবির এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর করতোয়া নদীর আওলিয়া ঘাটে শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৭২ জন নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে ৭১ জনের মরদেহ বিভিন্ন সময় উদ্ধার হয়। স্বজন হারাদের সে আর্তনাদ আজও থামেনি।
Advertisement
এদিকে আওলিয়া ঘাটে ঝুঁকি নিয়ে এখনো চলাচল করছে দুটি ডিঙি নৌকা। নৌকাডুবির পর তিন মাসের মধ্যে করতোয়ার নদীর আওলিয়ার ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের কৃষ্ণ কুমার বলেন, বদ্বেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া পূজায় আমিসহ পরিবারের সাতজন গিয়েছিলাম। আমার বড় ভাইসহ পাঁচজন নৌকাডুবিতে মারা যান। নৌকায় অনেক লোক উঠেছিলেন। কিন্তু কেউ বলেননি, এতো লোক ওঠা যাবে না। আমরা ফেরার পথে ওই নৌকাতে ছিলাম। চোখের সামনে এতগুলো মানুষ মারা গেল। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠি।
আরও পড়ুন: ‘যাত্রীরা যে পাশেই যাচ্ছিলেন সে পাশেই ঢুকছিল পানি’
Advertisement
চিলাহাটী এলাকার অতুল চন্দ্র বলেন, এ ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ করা হলে আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ চার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের কষ্ট কমে যাবে। আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবির ব্রিজটি নির্মাণ হলে হয়তো ৭২ জন মানুষ মারা যেত না। আমাদের মন্ত্রী ভোটের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটির বাস্তবায়ন চাই আমরা।
আওলিয়া ঘাটের বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকেই শুনতেছি এ ঘাটে সেতু হবে। কিন্তু হয়নি এখনো। আগের এমপিও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম সুজন ১৫ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন। প্রতিবার ভোটের সময় বলেন, এবার হবে।
এ বিষয় মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম শামীম বলেন, আওলিয়ার ঘাটের ব্রিজটি আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। কারণ করতোয়া নদীটি আওলিয়ার ঘাট অংশে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট, বড়শশী ও কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করেছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটীর মানুষ এ ঘাট দিয়ে পারাপার হন। ব্রিজটি হলে বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।
আরও পড়ুন: ৪৬ দিন পর মেয়ের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার, এখনো নিখোঁজ বাবা
Advertisement
বদ্বেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দির কমিটি সভাপতি নিতিশ কুমার বকশি মুকুল বলেন, বদ্বেশ্বরী মন্দিরে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মানুষ আসেন। গত বছরও অনেক ভক্ত এসেছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনাটি এখনও আমাদের বেদনা বিধুর করে।
পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, আওলিয়ার ঘাটে ৮৯১ মিটার একটি পিসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শিগগির ব্রিজটির দরপত্র আহ্বান করা হবে। এটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।
এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আওলিয়ার ঘাটে একটি ব্রিজ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি। ইতোমেধ্য ব্রিজটির টেন্ডার প্রসেস, ডিজাইন সবকিছু সম্পন্ন হয়েছে। ব্রিজটির প্রকল্পিত মূল্য একশ কোটি টাকার ওপরে। এজন্য মন্ত্রী পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির একটি অনুমোদন নিতে হবে। ব্রিজটি অনুমোদনের এটা সর্বশেষ ধাপ।
সফিকুল আলম/আরএইচ/জিকেএস