ম্যাজিক লণ্ঠন, বায়োস্কোপের নাম শুনলেও তা সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই এ প্রজন্মের তরুণদের। মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ নানা ধরনের প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে গেছে অতীত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। কালের বিবর্তনে এখন দেখা মেলা ভার রেডিও, ক্যাসেটপ্লেয়ার, ভিডিওপ্লেয়ার, বাদ্যযন্ত্র, ক্যামেরা, প্রজেক্টরের মতো পুরোনো সব জিনিসের।
Advertisement
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশ-বিদেশের অতীত চলচ্চিত্রের বিভিন্ন জিনিস সর্ম্পকে জানাতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংগঠক ও নির্মাতা আহসানুল করিব লিটন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির ডেপুটি পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত উদ্যেগে চালু করেছেন ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভটি। আর সেখানেই সংরক্ষণ করা হয়েছে ম্যাজিক লণ্ঠন, বায়োস্কোপ, রেডিও, ক্যাসেটপ্লেয়ার, ভিডিওপ্লেয়ার, বাদ্যযন্ত্র, ক্যামেরা, প্রজেক্টরসহ ১৯১০ থেকে ১৯৩০ সালে পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এখানে শুধু ফিল্ম ও কালচারলই নয় রাখা হবে রাজশাহীর গুনি মানুষ ও মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কিত জিনিসও।
আরও পড়ুন: দিনে ৪ ঘণ্টা চা বেচে মাসে আয় ২০ হাজার
জানা গেছে, রাজশাহীর শিরোইল মঠপুকুর এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে অস্থায়ীভাবে চালু করা হয়েছে ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ। প্রায় ৪৫০ পুরাতন জিনিসপত্র নিয়ে গঠিত এই আর্কাইভ। প্রতিটি জিনিসের গায়ের পাশেই লেখা আছে সেটির পরিচিত, সময়কাল ও ব্যবহার।
Advertisement
এ বিষয়ে আহসানুল করিব লিটন বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমি ফিল্ম নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। ২০১১-১২ সালের দিকে মনে হয়েছিল এটি একটি ফিল্ম আর্কাইভ তৈরি করবো। তখন থেকেই সংগ্রহ শুরু করেছি। ২০১৮ সালের দিকে এসে মনে হয় এটি আরও সমৃদ্ধ করতে ফিল্মের সঙ্গে কালচারাল জিনিসগুলোও জড়িত। তাই কালচারাল জিনিসপত্র সংগ্রহ শুরু করি। এসব সংগ্রহ করার কাজ অনেক কঠিন। তবে ইন্টারনেটের কারণে কিছুটা সহজ হয়েছে। এসব সংগ্রহ করতে ছুটতে হয়েছে ভাঙরির দোকান থেকে বিদেশ। আবার অনেক কিছু সংগ্রহ হয়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে।
তিনি বলেন, আমার এখানে আছে দেশীয় কালচার যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ফিল্মের অনেক কিছু। তিনটি ঘরে এসব সংগ্রহ প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। এটি আরও বড় করা হবে। এটির পাশে আমার পৈতৃক সম্পত্তি আছে। সেখানেই স্থায়ীভাবে এটি নির্মাণ করা হবে। এখানে শুধুমাত্র ফিল্ম ও কালচারালই নয়, রাজশাহী অন্তত ৫০ জন গুনি মানুষের ব্যবহৃত ও অন্যান্য জিনিসপত্র থাকবে। থাকবে পুরাতন বই। এগুলোর পাশাপাশি থাকবে একটি মহাকাশ দেখার জন্য টেলিস্কোপ। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম পুরাতন থেকে শিক্ষা নেবে ও এগুলোর সঙ্গে পরিচিত হবে। আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেক কালচারাল জিনিসপত্র আছে সেগুলো সংগ্রহ করা হবে। এর জন্য কোনো টিকিট থাকবে না। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আমার ব্যাক্তি উদ্যোগে এটি নির্মাণ করা হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪০ বছর ধরে নারিকেল গাছ পরিষ্কার করেই চলছে বিরুর সংসার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ও মডারেটর প্রফেসর ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ক্যামেরা ও সিনেমা দেখানো নানা যন্ত্রাংশের বিবর্তন এসেছে। যে আর্কাইভ তৈরি হয়েছে সেখানে এই ধরণে আনকে যন্ত্রাংশ আছে। প্রযুক্তি বিকাশ যে ঘটেছে তার একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সামগ্রী যন্ত্রাংশ আছে। এটা নতুন প্রজন্মকে চলচ্চিত্রের শিল্পের সম্পর্কে ধারণা দেবে। একই সঙ্গে তাদের নির্মাণের দিকেও আগ্রহী করবে। চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলেও এগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এটি নিঃসন্দেহে খুব ভালো উদ্যোগ।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্ম এটি থেকে আরও আগ্রহী হবে। আমার জানা মতে, এমন সংগ্রহশালা খুব কম আছে। তবে যেগুলো আছে সবই ব্যক্তিগতভাবে করা ও ছোট আকারে করা। এমন বড় সংগ্রহশালা আর নেই।
সাখাওয়াত হোসেন/জেএস/জেআইএম