২০ বছর বয়স থেকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন নারিকেল গাছ ঝাড়ার (পরিষ্কার)। এখন তার বয়স প্রায় ৬৫। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে এখনো তাকে ছুটতে হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে। একটি নারিকেল গাছ পরিষ্কার করে তিনি উপার্জন করেন ৫০-১০০ টাকা। কেউ আবার গাছপ্রতি দু-একটা নারিকেল দেন। এগুলো বিক্রি করেই চলে তার সংসার।
Advertisement
বলছি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাঁচিয়া মীরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা বিরু বর্মণের কথা। চার ছেলে-মেয়েসহ ছয় সদস্যের সংসার। একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরে কোনো রকমে দিন কাটছে তাদের। প্রায় ৪০ বছর ধরে নারিকেল গাছ পরিষ্কার করেই সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিরু বর্মণ প্রথমদিকে দিনমজুরি শুরু করলেও সেই কাজ তিনি বেশিদিন করতে পারেননি। ২০ বছর বয়স থেকে শুরু করেন নারিকেল গাছে ওঠার কাজ। কখনো অন্যের গাছের নারিকেল পারা, আবার নারিকেল গাছ পরিষ্কার করাই তার পেশা। ৪০ বছর ধরে এ কাজ করেই চলে তার সংসার।
আরও পড়ুন: ‘রাস্তায় বের হলে সবাই অন্যভাবে তাকায়, মনে হয় আমি মানুষ না’
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, এলাকার প্রায় সবার বাড়িতে নারিকেল গাছ আছে। ভালো ফলন নিতে ছয় মাস পরপর গাছ ঝেড়ে নিতে হয়। এসব গাছ বিরু বর্মণ ঝেড়ে দেন। উচ্চতা ভেদে প্রতিটি গাছ পরিষ্কার বাবদ ৮০ থেকে ১০০ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। তবে লোকটির বয়স বেশি হওয়ায় এখন তাকে গাছে তুলে দিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়।
আজিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, বিরু বর্মণ অনেক দিন থেকে এই কাজ করেন। গ্রামের নারিকেল গাছের কাজ করেই তার সংসার চলে। বয়সের ভারে এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। স্থানীয় সরকার বেষ্টনীর মাধ্যমে যদি তাকে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয় তাহলে তার বাকিটা জীবন ভালো চলবে।
বিরু বর্মণ জাগো নিউজকে বলেন, নারিকেল গাছ পরিষ্কারের জন্য অনেকের ডাক পাই। প্রতিদিন এ কাজটি করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। এ দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। তবে আগের মতো এখন আর শরীর চলে না। বয়সের কারণে গাছে উঠলে হাত-পা থরথর করে কাঁপে। আমাকে যদি সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা হতো তাহলে হয়তো শেষ বয়সে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গাছ পরিষ্কার করে সংসার চালানো বিরু বর্মণের জন্য খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।
Advertisement
আরও পড়ুন: পাটে লোকসান, কাঠিতে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা
তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম লেবু জাগো নিউজকে বলেন, বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না বিরু বর্মণ। তবে ভোটার আইডি কার্ডে তার বয়স কম লেখা হয়েছে। এজন্য তাকে বয়স্ক ভাতার অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। বয়স হলেই তাকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে।
শামীম সরকার শাহীন/জেএস/এমএস