দেশজুড়ে

চার বছরের প্রকল্প ১৩ বছরেও হলো না শেষ

যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে সিরাজগঞ্জে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম শিল্প পার্ক। ৪০০ একর জায়গার ওপর এ শিল্প পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। তবে এ প্রকল্পের ব্যয় ও কাজের মেয়াদ ছয় বার বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ এখনও অনিশ্চিত। প্রকল্পের কাজ চার বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। ফলে সপ্তম দফায় আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে।

Advertisement

শিল্প পার্ক নির্মাণের কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে দেরি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কোভিড-১৯ মহামারিসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রুগ্ন প্রকল্প হিসেবে আবারো মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

সিরাজগঞ্জ বিসিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় পরে প্রথম সংশোধনীর সময় এক বছর বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি। এ পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় বাড়ানো হয় এক বছর। তৃতীয় সংশোধনীর সময়ও মেয়াদ বাড়ে এক বছর। ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই দফায় আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় দুই বছর। এতেও শেষ না হওয়ায় সপ্তমবারের মতো ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছরের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের শিল্প জোন হবে সিরাজগঞ্জ, গড়ে উঠবে ৮২৯টি কারখানা

Advertisement

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের পরিচালক জাফর বায়েজিদ জাগো নিউজকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় কাজ শুরু হতেই দেরি হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৪০০ একর জমি ২০১৪ সালে বুঝে পাই। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন, নদী তীরবর্তী হওয়ায় তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদনসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রয়োজনীয় অনুমোদন সংগ্রহ করতে অনেকটা সময় চলে যায়।

তিনি আরও বলেন, এ সব অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ মাঠে গড়ায়। বিশাল এলাকায় মাটি ভরাটের কাজের মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত শিল্প পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ কাজে ১২ থেকে ১৩টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ঠিকমতো কাজ করছে না। এজন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে।

তিনি জানান, এর আগে ছয় ধাপে ৬ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে এবার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই বাড়তি মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। না হলে যেমন আছে তেমন অবস্থায় প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করা হবে।

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্কের সহকারী প্রকৌশলী হিরন্ময় বর্ধন জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ। এছাড়া একই সময়ে ব্যয় হয়েছে ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এরপর সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর সময় ১১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ফের ১৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করে ৫৭০টি শিল্প স্থাপন করা হবে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বিসিক শিল্প পার্ক চালু জুনে: শিল্পমন্ত্রী

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সূর্য জাগো নিউজকে বলেন, শিল্প পার্কটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সঙ্গে সড়ক, রেল এবং নৌপথের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় কাঁচামাল আনা ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

এফএ/এএইচ/জেআইএম