দেশজুড়ে

মাথা-লেজ কাটা ইলিশই গরিবের ভরসা

সাধ থাকলেও দরিদ্রদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে রুপালি ইলিশ। তাই পটুয়াখালীর আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা কাটা ইলিশেই এখন ভরসা নিম্নবিত্তদের। ভালো ইলিশ কেনার সামর্থ্য না থাকায় মাথা বা লেজ কাটা ইলিশ কিনতে হচ্ছে তাদের।

Advertisement

আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাশের খুচরা মাছ ব্যবসায়ী মো. জুয়েল বলেন, চার-পাঁচ বছর আগে ইলিশ খুব সস্তা ছিল। বড় সাইজের ইলিশও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি ছিল। কিন্তু এখন একটি এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম ১৬০০-১৭০০ টাকা। তাই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে এই ইলিশ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে তারা মাথা-লেজ কাটা, পচা মাছ বেশি কিনছেন। ভালো মাছ কেউ কিনতে পারেন না।

শুধু জুয়েল না আলীপুর বাজারের শেখ রাসেল সেতুর নিচে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পরে খুচরা মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্চবিত্তরা অল্প কিছু ভালো ইলিশ কিনলেও বেশিরভাগ দরিদ্র ক্রেতার ভরসা সমুদ্র থেকে আসা কাটা ইলিশ। এই মাছগুলো জালে আটকে থাকার সময় সমুদ্রের বড় কোনো মাছের কামড়ে লেজ বা মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার কিছু মাছ জাল থেকে খোলার সময়ও শরীরের একাংশ কেটে ফেলতে হয়।

মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেলোয়ার নামে এক ক্রেতা ওই কাটা ইলিশের দাম জিজ্ঞাসা করছিলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি কুয়াকাটা সৈকতের একজন ফটোগ্রাফার। বাজারে এসে দেখি ভালো ইলিশের অনেক দাম, যা আমার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই আমি কাটা ইলিশের দাম জিজ্ঞাসা করছি। ছোট-বড় মিলিয়ে কাটা এক কেজি ইলিশ চাচ্ছে ৩৫০ টাকা। এখন দেখছি কাটা ইলিশ কেনাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে। দেখি যদি আরেকটু কমে পাই তাহলে এক কেজি নিয়ে যাব।

Advertisement

ছবি না তোলা এবং নাম না প্রকাশের শর্তে আরও এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছরই সন্তানদের জন্য কমবেশি ইলিশ কিনি। কিন্তু এখন আর ইলিশ কেনার মতো সামর্থ্য নেই। আমি একজন মধ্যবিত্ত। তাই এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকা আমার জন্য অনেক বড় কষ্টের। আজ রাতে কিনতে এসেছি। যাতে কাটা মাছ হলেও ইলিশের স্বাদটা নিতে পারি।

ওই বাজারে আব্দুল্লাহ নামে এক মাছ বিক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, সমুদ্র থেকে যখন জেলেরা মাছ নিয়ে ফিরে তখন তাদের মাছের মধ্যেও অনেক মাছ আসে মাথা, লেজ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ কাটা। এগুলো একসময় জেলেরা নিয়ে আসতো না। কিন্তু এখন এগুলোর অনেক চাহিদা। তাই এই মাছগুলো জেলেরা নিয়ে এলে আমরা অর্ধেক দামে কিনে নিই। পরে মাছগুলো আমরা সাইজ অনুযায়ী ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করি। যে কারণে অনেক গরিব মানুষ এবং মধ্যবিত্ত ইলিশের স্বাদটা নিতে পারে। তুলনামূলক এখন ভালো মাছের চেয়ে এ অর্ধকাটা মাছগুলোই বেশি চলে।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এমআরআর/এমএস

Advertisement