খেলাধুলা

শেষ মুহূর্তে ভাগ্যটা সহায় হলো না

তিন বলে মাত্র দুটি রান। হাতে তখনো চার উইকেট। ক্রিজে সবচেয়ে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিম। এ অবস্থায় যদি ১ রানে হেরে যেতে হয়, তাহলে একে চরম দুর্ভাগ্যছাড়া আর কীই বা বলতে পারি! অথচ পুরো ম্যাচর দিকে তাকালে দেখা যাবে সবকিছুই যেন আমাদের পক্ষে ছিল।চার-পাঁচটি ক্যাচ মিস করেছে তারা। তামিম দু’বার লাইফ পেয়েছে, সাকিব পেয়েছে। ওরা বেশ কয়েকটি বাউন্ডারিও ছেড়েছে। এতকিছু দেখে মনে হয়েছিল সব কিছুই আমাদের ফেভারে। কিন্তু শেষ তিনটি বলে ভাগ্য এভাবে ঘুরে গেলো যে, বিশ্বাসই হচ্ছে না এখনো।পুরো ম্যাচে ভাগ্য আমাদের পক্ষেই ছিল। শেষ মুহূর্তে ওই তিনটি বলেই সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ওই তিন বলে ভাগ্য পুরোপুরি ঘুরে গেছে। যে কারণে এত কাছে এসেও জয় অধরা থেকে গেলো। অথচ, সেমিফাইনালে ওঠার জন্য এই ম্যাচটাতে আমাদের জয় খুব প্রয়োজন ছিল। তার চেয়ে ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানোর চেয়ে বড় যেন আর কিছু ছিল না আমাদের জন্য। খুব কাছে এসেও সে স্বপ্ন পূরণ হলো না।অথচ, প্রথম থেকে দেখুন, আমরা টস জিতলাম। বোলিং ভালো হচ্ছিলো, ফিল্ডিং ভালো হচ্ছিলো। ব্যাটিংও খারাপ হচ্ছিলো না। যদিও তারা বেশ কয়েকটা ক্যাচ মিস করেছে। তবুও তামিম ৩২ বলে ৩৫, সাব্বির, সাকিব, সৌম্যরা ছোট ছোট ইনিংস খেলে সহজ জয়ের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশকে।মাহমুদুল্লাহ আর মুশফিক যে দুটি শট খেলে আউট হয়েছে, এ দুটি শট আসলেই বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার মতো। বাউন্ডারি হলে তারা আজ হিরোই হয়ে যেতেন। দুর্ভাগ্য। বাউন্ডারি হয়নি। ক্যাচ হয়ে গেছে। যে কারণে সবাই এখন তাদের ভিলেন বানাবে। আসলে ওই দুটি শট ক্লিক করেনি তো তাই, এখন সমালোচনা হবে। ক্লিক করলো হতো- তারা হিরো। অন্যসময় তো তারা এভাবেই ফিনিশিং শট খেলেছে।এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহ এমন শট খেলেই জিতিয়েছে বাংলাদেশকে। তবুও আমি মনে করি, দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যানের উচিৎ ছিল অন্তত গ্রাউন্ড শট খেলে সহজ জয়টাকে হাতের মুঠোয় আনা। আসলে ভাগ্যটা ভালো ধোনিরই। সব সময়ই দেখেছি, ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে থাকে সে। আজও শেষ মুহূর্তে ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে গেলো।শেষ ওভারেও যখন ১১ রান প্রয়োজন ছিল, তখন খুব বেশি কঠিন কিছু মনে হচ্ছিলো না। মুশফিক পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে জয়টা যেন হাতের মুঠোয় নিয়ে আসলো। কিন্তু হঠাৎ ভোজবাজির মতো যেন সব পাল্টে গেলো। পরপর দুটি বলে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানের আউট, বিশ্বাসই করা যাচ্ছে না। আর শেষ বলে বাউন্ডারি মারার মতো বলটিতে কেন শুভাগত ব্যাটই লাগাতে পারলো না, সেটাই বুঝতে পারছি না। অথচ ওটাতে স্কয়ার কাট করে বাউন্ডারিও মারা যেতো।ভারতের ফিল্ডাররা যদি ক্যাচগুলো মিস না করতো, তাহলে ম্যাচটাও এত ক্লোজ হতো না। হারের যন্ত্রণাটাও এতটা জ্বালা দিতো না। কিন্তু এভাবে পরাজয় কেউই মেনে নিতে পারছে না। নিশ্চিত, এই পরাজয়ের পর দেশের ১৬ কোটি মানুষ খুব কষ্ট পেয়েছে। দেশের মানুষ যেমন ব্যথিত, তার চেয়েও বেশি কষ্টে মুষড়ে পড়েন খেলোয়াড়রাও। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারি। একটা পরাজয় কত কষ্ট দেয় আমাদেরকে। আর এমন ক্লোজ ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালের পর সম্ভবত এত ক্লোজে গিয়ে এই ম্যাচটা হারলাম।আগে থেকে বলছিলাম, স্পিনিং উইকেট যেহেতু, ব্যাটিংয়ে একটা সারপ্রাইজ দিলেও দিতে পারেন মাশরাফি। কারণ, স্পিনিং উইকেটে মেরে খেলার মতো সামর্থ্য তার রয়েছে। সেই সারপ্রাইজটাই দিল মাশরাফি। ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছে। যদিও শট খেলতে পারেনি। মাত্র ৬ রান করে আউট হয়ে গেছে। আর একটা-দুটা ছক্কা মারতে পারলে ভালো লাগতো। দলেরও অনেক উপকার হতো। তবে সিদ্ধান্তটা আমার মতে সঠিকই হয়েছে। আসলেই এটাই মাশরাফি। আর কারণেই মানুষ মাশরাফিকে এতটা ভালোবাসে।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক।আইএইচএস/বিএ

Advertisement