শফিক রিয়ান
Advertisement
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে চোখ বোলালেই দেখতে পাই ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ওপর নির্মিত অসংখ্য কন্টেন্ট। বিশ্বায়নের এ যুগে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে নিজ ভাষা ভালোভাবে না জেনে ভিনদেশি ভাষার চর্চা করতে গেলে মননশীল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা কঠিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন।’ তাই নিজ ভাষাকে আগে ভালোভাবে জানতে হবে, ভালোবাসতে হবে।
বাংলাদেশের এই অসংখ্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিড়ে নিজ ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন বাচিকশিল্পী আনিসুল ইসলাম। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুদ্ধ উচ্চারণ, আবৃত্তি, উপস্থাপনা, অনুপ্রেরণামূলক ভিডিওসহ বাচিক শিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করছেন ২০১৯ সাল থেকে।
আনিসুল ইসলাম ১৯৮৮ সালের ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বালক উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসি ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে বিবিএ ও ফিন্যান্সে এমবিএ সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপস্থাপক, ভয়েস আর্টিস্ট ও বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সংবাদপাঠক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে মঞ্চস্থ হলো ‘ডেঙ্গু অভিযান’
২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার পরপর সবাই যখন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স করছেন; তখন তিনি আবৃত্তি শেখা শুরু করেন। তার শিক্ষক ছিলেন আবৃত্তিকার ও বিটিভির উপস্থাপক জহিরুল ইসলাম রানা। আবৃত্তি শেখার ক্ষেত্রে বড় বোন ও পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছেন। অনলাইনে আবৃত্তি শিক্ষক হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সব সময়ই অনুপ্রাণিত করেছেন অ্যাডভোকেট নজরুল হায়দার।
গতানুগতিক জীবনের বাইরে মিডিয়ায় কাজ করার স্বপ্ন ছিল আনিসুলের। সেই স্বপ্নকে পুঁজি করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের জায়গায় কাজ করছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজের জ্ঞান ও কাজগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শুদ্ধ উচ্চারণ ও সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলতে পারার চিন্তা মাথায় রেখে ইউটিউব ও ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি শুরু করেন। বর্তমানে তার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ অতিক্রম করেছে। তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ অতিক্রম করেছে ৭ লাখ ফলোয়ার।
আবৃত্তিচর্চা সম্পর্কে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি করতাম। কেউ যখন আবৃত্তি করতেন, মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। কবিতা আবৃত্তি, শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা, উপস্থাপনা ইত্যাদি বাচিক শিল্পকে সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছাতে একপর্যায়ে কাজ করতে থাকি। সেই ক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যমগুলো সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। গুছিয়ে কথা বলা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও সুন্দর বাচনভঙ্গি একটি মানুষের জীবনে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখে।’
Advertisement
আরও পড়ুন: রুদেবিশ শেকাবের অবিনশ্বর ভালোবাসা
তিনি বলেন, ‘একসময় অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি। তবে সব সময়ই কাছের মানুষদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ইউটিউবে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম বাচিক শিল্পের ওপর তেমন ভালো কন্টেন্ট নেই, সেটি আমাকে কষ্ট দিতো। যখন কাজ করতাম; তখন মনে হতো নতুন কিছু করছি যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে। তারপর আস্তে আস্তে আমার কাজগুলো মানুষের কাছে ছড়িয়ে গেলো। যখন জানতে পারি, আমার কোনো কন্টেন্ট দেখে কেউ শুদ্ধ উচ্চারণ শিখছেন, আবৃত্তি করছেন, উপস্থাপনা শিখছেন; তখনই আমার কাজ করা সার্থক হয়ে ওঠে। তাই আমি চাই, আবৃত্তিচর্চা অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ুক।’
এসইউ/এমএস