হাঁসের একটি সেদ্ধ ডিমের দাম ৩২ টাকা। দুইটা নিলে দাম হয় ৬৪ টাকা। অথচ ‘খুচরা টাকা নেই জানিয়ে’ ক্রেতার থেকে আরও এক টাকা বেশি নিয়ে ৬৫ টাকা রেখে দিচ্ছেন বিক্রেতা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশপথের সামনে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
বিক্রেতার নাম সুমন। বয়স ২২-২৩ বছর। ক্রেতা পরিচয়ে সেদ্ধ ডিমের দাম জানতে চাইলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, হাঁসের ডিম ৩২ টাকা। দেশি মুরগির ডিমও ৩২ টাকা। ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি করছেন ২৫ টাকা। আর ফার্মের মুরগির সাদা ডিম ২২ টাকা।
আরও পড়ুন>> আরও ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন
Advertisement
তার পাশেই হাঁকডাক ছেড়ে ডিম বিক্রি করছেন সাইফুল ইসলাম। বয়সে তিনিও তরুণ। একই দামে ডিম বিক্রি করছেন। হাসপাতালের সামনের আরও দুজন ডিম বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিন্ডিকেট করেই বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করছেন তারা।
এদিকে, শুরুতে ডিমের দাম দর-দাম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জানাচ্ছিলেন বিক্রেতারা। কিন্তু ক্রেতা পরিচয় ছেড়ে সংবাদকর্মী পরিচয়ে ডিমের দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তারা। এতক্ষণ ছবি ও ভিডিও করতে বাধা না দিলেও এবার পাল্টে যায় তাদের আচরণ। বারবার নিষেধ করেন ছবি তুলতে এবং ভিডিও করতে।
আরও পড়ুন>> সরকার নির্ধারিত দাম এক সপ্তাহেও অকার্যকর
এমনকি মুহূর্তেই ডিমের দামও কমে যায়! ৩২ টাকা পিস নয়, ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে দাবি করেন তারা। তবে, ছবিতে ও ভিডিওতে চেহারা দেখাতে নারাজ। বিক্রেতা সাইফুল ক্ষিপ্ত হয়ে বলেই ওঠেন, ‘ভিডিও থামান, না হলে খারাপ হবে ভাই। আপনে সাংবাদিক হলেও আমার ভিডিও নিতে পারেন না।’
Advertisement
ডিম কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দেন তারা। একপর্যায়ে চার ডিম বিক্রেতা অনুরোধ করেন, ‘এসব নিয়ে লিখেন না ভাই। ভিডিও ছাইড়েন না। এখানে একটু দামটা বেশি।’
চার বিক্রেতার মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোকান চারটা দেখছেন ঠিকই। মালিক তো একজনই। আমাদের বড় ভাই।’ কে সেই বড় ভাই, তা বলতে নারাজ তিনি। একপর্যায়ে জানালেন, ‘এখানে আর কাউকে ডিম বিক্রি করতে বসতে দেওয়া হয় না। ঢোকার এ পথে ডানপাশে আমরা দুজন, আর বামপাশে ওরা দুজন ডিম বিক্রি করে।’
আরও পড়ুন>> আমদানির খবরে পাইকারিতে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম
বিক্রেতা সুমন জানান, তারা কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারিতে বেশি দামে ডিম কিনছেন, তাই এখানে বেশিতে বিক্রি করছেন। এর বেশি কিছু তিনি নিজেও জানেন না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা প্রায় এক হাজার। শুধু বৃহস্পতিবার এ হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি রয়েছেন ২৬৪ জন। এছাড়া নানা রোগে আক্রান্তরা ছুটে আসেন এ হাসপাতালে। রোগী ও স্বজনরা হাসপাতালের সামনে থেকেই ফলমূল, ডিমসহ খাদ্যসামগ্রী কিনে থাকেন। তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা।
স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত। আট বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ডিম কিনতে এসে অবাক সিরাজুল ইসলাম। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। বিক্রেতাকে সিরাজুল বললেন, ‘সিঙ্গাইর আইয়েন আপনাকে ১৬ টাকায় হাঁসের ডিম খাওয়ামু।’ বিক্রেতার জবাব, এটা মানিকগঞ্জ না, ঢাকা ভাই। এইহানে দাম এমনই।’
সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে হাসপাতালে এসেছি। আমার স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে অসুস্থ। খাবার কিনতে এসেছিলাম। ডাক্তারে ভালো খাওয়াতে বলছেন। তার জন্য একটা ডিম নিলাম, মেয়েটাও একটা খাইতে চাইলো। দুটো ডিমের দাম ৬৪ টাকা। খুচরা নেই বলে ৬৫ টাকা রেখে দিলো।’
আরও পড়ুন>> ডিম আমদানির অনুমতির প্রভাব পড়েনি বাজারে
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের সামনে ডিমের এমন দাম দেখে আশপাশে ঘুরে আরও কয়েকজন বিক্রেতার সন্ধান মেলে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে ২৫০ মিটার দূরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এ হাসপাতালের সামনেও কয়েকজন ডিম বিক্রেতাকে দেখা গেলো। তারা দেশি হাঁস ও মুরগির সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন ২৫ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম ২২ টাকা।
সেখান থেকে শ্যামলীর দিকে যেতে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড, যা শিশুমেলা নামে পরিচিত। সেখানেও দুজনকে ডিম বিক্রি করতে দেখা যায়, তারাও ২৫ টাকা দরে দেশি হাঁস-মুরগির সেদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন। এছাড়া আগারগাঁও, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় সর্বোচ্চ ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি হাঁস-মুরগির সিদ্ধ ডিম।
এ বিষয়ে কথা হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের ডিমের পাইকারি আড়তদার মোকাররম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বড় সাইজের ডিম হলে আমরা পাইকারিতে ১০০ ডিম ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি আজ। সেই হিসাবে ১৮ টাকা পিস পড়ে। একটু ছোট সাইজ হলে সেগুলো ১৭ টাকা পিস দরে ছেড়েছি।’
আরও পড়ুন>> আমদানি করা ডিম মিলবে ১০ টাকায়
২৭ বছর ধরে ডিমের ব্যবসা করা মোকাররম হোসেন বলেন, ‘যারা খুচরা বিক্রি করে, তারা তো ২১-২২ টাকায় বিক্রি করছেন। সিদ্ধ করে যারা বিক্রি করছেন তারা হয়তো ২৫ টাকা। কিন্তু ৩২ টাকা হওয়ার কথা নয়।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিম ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের নিয়মিত অভিযান তো চলছেই। ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে নির্ধারিত দামে যাতে বিক্রি করা হয়, তা নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন। অসাধু অনেক ব্যবসায়ী তারপরও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। হাসপাতালের সামনে বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি আমরাও জেনেছি। এটা নিয়েও কাজ করবো।’
এএএইচ/এমএএইচ/জেআইএম