অর্থনীতি

ঋণের শর্ত কতটা পূরণ হলো, জানতে অক্টোবরে আসছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ও করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ঋণের শর্ত কতটা পূরণ হলো, তা দেখতে আগামী মাসে অর্থাৎ অক্টোবরে ঢাকা সফর করবে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

Advertisement

সফরকালে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিবিএসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বসবে আইএমএফ। জানা গেছে, পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও বৈঠক করবে প্রতিনিধিদলটি।

আরও পড়ুন: নতুন মডেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসন চায় আইএমএফ

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি আগামী ৫ অক্টোবর দিনব্যাপী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস নীতি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। ৯ অক্টোবর বৈঠক হবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে। বৈঠকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

Advertisement

জানা গেছে, আইএমএফকের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের কী জবাব হবে, এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়৷ এতে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জ্বালানি বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সংস্থাগুলো আইএমএফকে তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বৃহস্পতিবারের এই আন্তঃসভায় উপস্থিত ভ্যাটের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভ্যাট আদায়ের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। এসময় অর্থবিভাগ থেকে ভ্যাট অটোমেশন, ইএফডি মেশিন বসানোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ভ্যাট থেকে জানান হয়, তারা সঠিক পথেই এগোচ্ছেন।

আরও পড়ুন: অর্থপাচার না হলে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হতো না

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে কিছু খাতের ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিয়েছে ভ্যাট বিভাগ। এছাড়া নতুন কিছু খাতে ভ্যাট আরোপ করেছে। বিষয়গুলো আইএমএফকে জানানো হবে।

Advertisement

এছাড়া পেট্রো বাংলাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাটের বাকী টাকা উদ্ধারে অর্থবিভাগের সাহায্য চায় ভ্যাট বিভাগ। একই ভাবে আয়কর বিভাগ ও বিভিন্ন খাতে আটকে থাকা টাকা ফেরতে অর্থবিভাগের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এসময় অর্থবিভাগকে জানান হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওনা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আইনি জটিলতায় আটকে আছে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও আয়কর আদায় ভালো রয়েছে।

এর আগে গত জুলাইয়ে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে। তখন বেশকিছু শর্তের কথা জানায় দাতা সংস্থাটি।

আরও পড়ুন: কর বাড়ায় কমেছে ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন, রাজস্ব আহরণে ভাটা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব শর্ত পূরণে কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে বাজেট অধিবেশনে পাস হয়েছে নতুন আয়কর আইন। যে আইনের আওতায় ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বেশকিছু নতুন খাতকে করের আওতায় আনা হয়েছে। আয়কর বিভাগের রিস্ক ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে কর গোয়েন্দা ইউনিট চালুর বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি আয়কর খাতে কমপ্লায়েন্স পূরণেও কাজ চলছে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় প্রতিনিধিদলটি প্রথম বৈঠক করবে কাস্টমস পলিসির সঙ্গে। একই দিনে করনীতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বৈঠক হবে ভ্যাট পলিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগ থেকে শুরু করে, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগ আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব বাড়াতে কাজ করছে। আগামী ৯ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে কাস্টমস আইনের অগ্রগতি, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং নতুন আয়কর আইনের কারণে রাজস্ব আদায়ে কতটা প্রভাব পড়বে, এরকম বেশকিছু বিষয় জানতে চাইবে আইএমএফ।

আরও পড়ুন: ৫০ বছরে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিক তথ্য চেয়েছে আইএমএফ

আগামী ৫ ও ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বৈঠকের কার্যবিবরণী বিশ্লেষণে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা, ইএফডি স্থাপনের অগ্রগতি, ভ্যাট প্রশাসনে সংস্কার, সম্ভাব্য কর্মসূচি, বেঞ্চমার্ক, প্রযুক্তিগত সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি আইএমএফকে জানাবে ভ্যাট বিভাগ। অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়কর ও শুল্ক আদায়ের তথ্যও তুলে ধরা হবে।

এছাড়া চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা, কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের স্থিতি, কাস্টমস রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার, নতুন জাতীয় শুল্কনীতি এবং শুল্ক যৌক্তিকীকরণের পরিকল্পনা, কারিগরি সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর ব্যয় মূল্যায়ন, করনীতি সম্পর্কে ফলো-আপ, আয়কর আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনী এবং রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলোও আইএমএফকে জানাবে আয়কর ও শুল্ক বিভাগ।

এসএম/এমকেআর/জেআইএম