ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন বিষ্ণুপুর। এই ইউনিয়নের একটি গ্রাম কালাছড়া। ভারতের সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় কালাছড়া গ্রামটি এক সময় মাদকের অভয়ারণ্য ছিল। গ্রামের অনেকেই মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেক সময় মাদক চোরাচালানে নারী-শিশুদেরও ব্যবহার করা হতো। পাশাপাশি শিক্ষার হার কম হওয়ায় বাল্যবিয়ে ছিল গ্রামের অন্যতম সমস্যা।
Advertisement
এই অবস্থায় মাদক ও বাল্যবিয়েমুক্ত সমাজ গড়তে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স নায়েক আবু মুসা এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেন। গ্রামের শিশু-কিশোরদের মাদকের করালগ্রাস থেকে রক্ষা করতে ফুটবল খেলা প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন তিনি।
শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করছেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও। এতে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে উঠতি যুব সমাজ।
ল্যান্স নায়েক আবু মুসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময় এলাকার শিশু-কিশোরদের কথা চিন্তা করে ১৯৯৫ সালে নবজাগরণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। চাকরি থেকে অবসরের পর এই সংগঠনের মাধ্যমে শুরু করেন মাদক ও বাল্যবিয়ে বিরোধী কার্যক্রম। গত ২৫ বছর ধরে বিনামূল্যে শিশু-কিশোরদের ফুটবল খেলা প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন তিনি।
Advertisement
প্রতিদিন বিকেলে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার নানা কলাকৌশল শেখানোসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৫১। সংগঠনের আওতায় শিশু-কিশোরদের চারটি ও যুবকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করে নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলে।
আবু মুসার অধীনে ফুটবল প্রশিক্ষণ নেওয়া কিশোর ফাহিম জাগো নিউজকে বলেন, আমি এক বছর ধরে স্যারের অধীনে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। এখানে ফুটবল খেলায় আমার পরিবারও খুশি। স্যার বিনামূল্যে আমাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
আপন নামে আরেক কিশোর বলে, সকালে স্কুলে যাই। বিকেলে আমরা ফুটবল খেলা শিখি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, তার এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সামাজিক অবক্ষয় থেকে যুব সমাজকে রক্ষার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথা জানান তিনি।
Advertisement
ল্যান্স নায়েক (অব.) আবু মুসা বলেন, আমার সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর একটি নাটকের আয়োজন করি। এরপর এই সংগঠনের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হতে থাকেন। পরে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করি। পাশাপাশি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যেন বিপথগামী না হয়। এরপর থেকে বিগত ২৫ বছর ধরে আমি শিশু-কিশোরদের ফুটবল প্রশিক্ষণ ও খেলাধুলা অব্যাহত রেখেছি।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এমআরআর/জিকেএস