দেশজুড়ে

হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন মোমিন, কাছে নেই স্বজনরা

পচনশীল ক্ষত (গ্যাংগ্রিন রোগ) নিয়ে ২০ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বারান্দায় কাতরাচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব মোমিন। পরিবার-পরিজন থাকলেও তাকে দেখার কেউ নেই। হাসপাতালের রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার আর সরকারি দু-একটা ওষুধই তার বেঁচে থাকার সম্বল।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গছে, বৃদ্ধ মোমিন সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়ার মৃত আবুল মণ্ডলের ছেলে। এক সময় স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। করতেন রাজমিস্ত্রির কাজ। সাত বছর আগে বিচ্ছেদ হয়েছে স্ত্রীর সঙ্গে। ছোট দুই ছেলে মায়ের সঙ্গেই থাকেন। নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত বৃদ্ধ মোমিনের দুই মেয়ে। কেউই খোঁজ নিতে আসে না বৃদ্ধ বাবার।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ৩১ আগস্ট মোমিনকে তার বড় মেয়ে হাসি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মোমিনকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করেন। অর্থপেডিক কনসালটেন্ট ডা. মিলনুরজামান জোয়ার্দ্দারের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর তার মেয়ে আর আসেননি। তবে গুরুতর ও সম্ভাব্য প্রাণঘাতী রোগ গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসক দুদিন পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলেও অর্থ ও স্বজনদের কেউ পাশে না থাকায় তিনি চিকিৎসকদের অনুরোধ করে সদর হাসপাতালের বারান্দাতেই অবস্থান করেন।

অসহায় বৃদ্ধ মোমিন বলেন, দুই বছর আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করার সময় একটি ইটের টুকরা লেগে আমার পা কেটে যায়। এরপর সেখান থেকেই ধীরে ধীরে এ অবস্থা। আমার কেউ নেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষের অনুগ্রহে চিকিৎসা করানোর চেষ্টাও করেছি। অনেকেই বলে পা কেটে ফেলতে হবে। ২১ দিন ধরে সদর হাসপাতাল আছি। প্রথমে দোতলায় ছিলাম। কয়েকদিন পরে হাসপাতালের লোকজন আমাকে নিচতলায় সিঁড়ির এখানে রেখে গেছেন।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে যা খাবার দেয়, কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। সরকারি ওষুধ দু-একটা দেয়, তাই খাই। ডাক্তার আমাকে রাজশাহী যেয়ে পা কেটে বাদ দিতে বলেছেন। অপারেশন করা লাগবে। আমার কাছে জমানো মাত্র দুই হাজার টাকা আছে, কিন্তু একা একা কীভাবে যাবো রাজশাহী, আমি তো হাঁটতেই পারি না। নিয়ে যাবেই বা কে।

অভিমানের সুরে মোমিন বলেন, আমার বউ আমাকে তালাক দিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে গেছে সাত বছর আগে। তারা খোঁজ নেয় না। আর দুইটা মেয়ে আছে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারাও নিজ নিজ সংসারে থাকে। বড় মেয়েটা একদিন দেখতে এসেছিল। কিন্তু চলে গেছে। এখন আমি কী করবো, বুঝতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক কনসালটেন্ট ডা. মিলনুরজামান জোয়ার্দ্দার জাগো নিউজকে বলেন, মোমিন গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত। পচনশীল ক্ষত বা গ্যাংগ্রিন একটি গুরুতর ও সম্ভাব্য প্রাণঘাতী রোগ। রক্ত সরবরাহের অভাবে দেহের কোনো অঙ্গের কলামৃত্যু হলেই এ রোগ হয়। কোনো আঘাত বা সংক্রমণের ফলে অথবা রক্ত সঞ্চালনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় ভোগার ফলে যে কারো এ রোগ হতে পারে। পচনশীল ক্ষতের প্রাথমিক কারণ দেহকলাতে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া, যার ফলে কোষের মৃত্যু হয়। সদর হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা হয় না এবং আমি এ চিকিৎসা করার মতো বিশেষজ্ঞও না। যে কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এরপরও তিনি হাসপাতালের বারান্দাতেই অবস্থান করছেন, আমরা যতদূর পারছি তাকে চিকিৎসা ও হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছি। কিন্তু এভাবে বেশিদিন থাকলে তার অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

এসজে/জিকেএস

Advertisement