দেশজুড়ে

‘রাস্তায় বের হলে সবাই অন্যভাবে তাকায়, মনে হয় আমি মানুষ না’

রাস্তায় বের হলেই সবাই আমার দিকে অন্যভাবে তাকায়। আমাকে নিয়ে সবাই হাসি-ঠাট্টা করে। নানা ধরনের কটু কথা বলে। মনে হয় আমি যেন মানুষ না। সবার এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে সবার হাসি-ঠাট্টার জবাব দিতে চাই। এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু ওমর ফারুক (১২)।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের সুজন হাওলাদার ও রহিমা বেগমের সন্তান ওমর ফারুক। তার বয়স ১২ বছর হলেও উচ্চতা মাত্র দুই ফিট। আর এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্যই তার জীবনে নেমে এসেছে নানান কষ্ট। প্রথম দিকে না বুঝলেও একটু বড় হবার পর সে বুঝতে পারছে তাকে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন: বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুকে বাঁচাতে বাবা-মায়ের আকুতি

নিজের অবস্থাকে মেনে নিয়েছে এ শিশু। বুঝে গেছে যে হেরে গেলে চলবে না। শ্রমিক বাবার মুখে হাসি ফুটাতে হবে। আর তাই সে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেয়। কালকিনির ৭ নম্বর উত্তর কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখানে সে এখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।

Advertisement

তার বাবা সুজন হাওলাদার বলেন, ফারুক শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকেই এই অবস্থা। বেশিরভাগ মানুষই তাকে বামন হিসেবে চিনেন। তার বয়স বাড়লেও শরীরের গঠন বাড়েনি। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ওমর ফারুকই বড়। অন্য সন্তানরা স্বাভাবিক হয়েছে। আমার সামান্য উপার্জনে কোনো রকম সংসার চলে। ওর খুব ইচ্ছে পড়াশুনা করে চাকরি করবে। কিন্তু আমার অভাবের সংসারে ওকে ভালো একটা জামাও কিনে দিতে পারি না।একদিন কাজ করতে না পারলে সবাইকে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তবে ফারুকের স্বপ্ন সে লেখা পড়া শেষে চাকরি করে আমাদের সুখে রাখবে। তার প্রবল ইচ্ছে আছে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমি গরীব মানুষ তাই ওর দিকে তেমন নজর দিতে পারি না। ওকে ভালো কোনো খাবারও খাওয়াতে পারি না।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত শরিফুলের

তার মা রহিমা বেগম বলেন, ওমর ফারুক তার মনের জোরে প্রতিবন্ধকতা জয় করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। ওমর ফারুক জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার হাত-পা ও শরীর ছোট। স্কুলে যাতায়াতের জন্য তাকে কষ্ট সহ্য করতে হয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো তার পায়ে হেটে স্কুলে যেতে অনেক সময় লেগে যায়। সবাই ওকে দেখে হাসে। তবুও ওর মনোবলেই পড়াশুনা করছে।

কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ওমর ফারুকের যেহেতু পড়াশুনার প্রতি মনোযোগ আছে, সে পড়াশুনা করতে চায়। তাই তাকে সব রকম সহযোগীতা করা হবে।

Advertisement

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/জেএস/এএসএম