যশোরে নিয়ম লঙ্ঘন করে পাঁচ নদীতে আটটি সেতু নির্মাণের অভিযোগ এনে পাঁচ দপ্তরকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ছাড়পত্র না নিয়ে এবং নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির।
Advertisement
কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদের পক্ষে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সামছুল হক।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, যশোরের জেলা প্রশাসক এবং এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।
সেতুগুলো হলো- ভৈরব নদের ওপর ছাতিয়ানতলা, দাইতলা ও রাজারহাট সেতু, মণিরামপুরে মুক্তেশ্বরী ও শ্রী নদীতে দুটি, অভয়নগরের টেকা নদীতে একটি এবং শার্শার বেতনা নদীতে দুটি সেতু।
Advertisement
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বিআইডব্লিউটিএ ছাড়পত্র না নিয়ে এবং নীতিমালা লঙ্ঘন করে যশোরের ভৈরব নদসহ পাঁচটি নদ নদীতে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে আট সেতু। কম উচ্চতায় এসব সেতু নির্মাণ করায় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ও ৫ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছিল। বিআইডব্লিউটিএ পক্ষ থেকে উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও তা আমলে নেয়নি সরকারের এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
আরও পড়ুন: বৃহত্তর যশোরের উন্নয়নে ১১ দাবি
২০১০ গেজেট অনুসারে সেতুগুলো চতুর্থ শ্রেণির সেতু হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছে। সেতুগুলোর অভ্যন্তরীণ শিপিং অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর বিধান অনুসারে উল্লম্ব ছাড়পত্র হবে ৫.০০ মিটার এবং অনুভূমিক ছাড়পত্র হবে সর্বনিম্ন থেকে ২০ মিটার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ছাড়পত্র ছাড়া সংশ্লিষ্টরা সেতুগুলি নির্মাণ করতে পারবেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সরকারের এ দপ্তরগুলো এ বিধানের প্রতি কোনো কর্ণপাত না করে মাত্র ৪.৫৯ থেকে ১১.৫০ ফুট উচ্চতা রেখে এ সেতুগুলি নির্মাণ করছেন।
এসব সেতু বন্ধ করার জন্য ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনেও স্মারকলিপি দিয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো মোটেও পাত্তা দেয়নি। নিচু হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব সেতুর নিচ দিয়ে বড় নৌযান চলাচল করতে পারবে না। কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে নৌপথগুলো। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে কম উচ্চতার সেতুর সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়া মাত্রই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
Advertisement
এর আগে অপরিকল্পিত এসব সেতু নির্মাণ বন্ধ করে নদী বাঁচানোর দাবি জানিয়ে ছিলেন যশোরের পাঁচটি পরিবেশবাদী সংগঠন। তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদী প্রবহমান করতে নদী সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু অপরিকল্পিত এসব সেতু নদী প্রবহমান করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা। আমরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফলে এখন আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
তবে এলজিইডি যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম মঙ্গলবার রাতে বলেন, আমরা এখনো আইনি নোটিশ পাইনি। বিআইডব্লিউটিএ ছাড়পত্র নিয়ে কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। নিয়ম মেনে সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
মিলন রহমান/আরএইচ/জেআইএম