ডাচ ভাষায় ‘কিপ’ অর্থ মুরগি আর ‘স্টার’ অর্থ তারা। এ দুটি শব্দযোগেই কোম্পানিটির নাম রাখা হয়েছিল কিপস্টার। মাত্র ছয় বছর আগে, ২০১৭ সালে চার উদ্যোক্তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল নেদারল্যান্ডসের এই কোম্পানি। আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও ছুটে চলেছে কিপস্টারের জয়যাত্রা।
Advertisement
এটি মূলত একটি ডিম উৎপাদনকারী কোম্পানি। প্রাণী কল্যাণ, খাদ্যবর্জ্য মোকাবিলা এবং কার্বন-নিরপেক্ষ ডিম উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কিপস্টার।
তাদের খামারগুলোতে প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর দশটা খামারের মতো মুরগিগুলোকে খাঁচায় বন্দি জীবন পার করতে হয় না।
আরও পড়ুন>> প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষিকে যেভাবে বদলে দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস
Advertisement
ডিমের ব্যবসায় যেহেতু মোরগ দিয়ে কোনো লাভ হয় না, তাই অনেক কোম্পানি রয়েছে, যারা পুরুষ ছানাগুলো মেরে ফেলে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিপস্টার। তারা মোরগ ছানাগুলো আলাদা রেখে মাংসের জন্য লালন-পালন করে।
কিপস্টার খামারের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, তারা মুরগির বাচ্চাগুলো বাজার থেকে কেনা কোনো শস্যদানা খাওয়ায় না। পরিবর্তে বিভিন্ন সুপারমার্কেট ও খাবার প্রস্তুতকারকদের থেকে সংগ্রহ করা খাদ্যবর্জ্য খাওয়ানো হয়।
কিপস্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুড জ্যান্ডার্সের মতে, বিশ্বে উৎপাদিত শস্যের ৩০ শতাংশই পশুখাদ্যে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আমি চাই, আবাদযোগ্য জমির পুরোটাই মানুষের জন্য শস্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হোক।
বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে তিনটি খামার রয়েছে কিপস্টারের। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ম্যানচেস্টারে একটি খামার, যেখানের সব ডিমই কিনে নেয় মার্কিন সুপারমার্কেট জায়ান্ট ক্রোগার।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রে আরও অন্তত তিনটি খামার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কিপস্টারের। এসব খামারের প্রতিটিতে ২৪ হাজার মুরগি পালন করা যাবে। প্রাণীদের জন্য কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, তা দেখতে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে খামারগুলো।
কিপস্টারের খামারগুলোর ভেতরেই রয়েছে বাগান, গাছ, মুরগির দাঁড়ানো ও ঠোকরানোর জন্য গাছের ডাল। অন্য খামারগুলোতে যেভাবে মুরগিদের ঠোঁট কেটে দেওয়া হয়, কিপস্টার তার ঘোর বিরোধী।
এর খামারগুলোতে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্য, কারণ সেখানে কেবল সৌরবিদ্যুৎই ব্যবহার করা হয়।
জ্যান্ডার্স জানান, তাদের খামারগুলোতে ডেকালব সাদা মুরগি পালন করা হয়। এটি শান্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ জাত হিসেবে পরিচিত।
তিনি জানান, সাদা মুরগি ও সাদা ডিমে বাদামি মুরগি এবং বাদামি ডিমের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম কার্বন ফুটপ্রিন্ট রয়েছে। বাদামি মুরগি আকারে একটু বড় এবং খায় বেশি। সাদা মুরগি ও ডিমগুলো সূর্যের আলো আরও কার্যকরভাবে প্রতিফলিত করে।
কিপস্টার খামারের প্রাপ্তবয়স্ক মোরগ এবং ডিম উৎপাদন শেষ হওয়া মুরগিগুলো কিনে নেয় গ্রোসারি চেইন লিডল। এদের মাংস দিয়ে মিটবল তৈরি করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। মোরগ-মুরগির পাশাপাশি কিপস্টারের ডিমও কেনে লিডল।
প্রাণী কল্যাণের সর্বোচ্চ উন্নয়ন এবং নমনীয়তা নিশ্চিত করতে কিপস্টারের মুরগি পালনের এ পদ্ধতি গড়ে দিয়েছে ডাচ সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস এবং ওয়াজেনিনজেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ।
জ্যান্ডার্স জানান, তাদের এ পদ্ধতি শহরে মুরগি পালনের জন্য খুবই উপযুক্ত।
সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকেএএ/