দেশজুড়ে

৩৮ কোটিতে বিক্রি হয়ে গেলো পি কে হালদারের কুমিরের খামার

৩৮ কোটিতে বিক্রি হয়ে গেলো পি কে হালদারের কুমিরের খামার

ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের মালিকানায় থাকা কুমিরের খামার রেপটাইলস ফার্মস ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি নিলামে খামারটি কিনেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন।

Advertisement

রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেডের ম্যানেজার মোহাম্মদ আরিফ জাগো নিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ২০০৪ সালে উপজেলার উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৫ একর জমিতে মাত্র ৭৪টি কুমির নিয়ে ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ নামে দেশের প্রথম এ কুমির খামারটি চালু করেন উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ। পরে ২০১৩ সালে মুশতাক আহমেদের কাছ থেকে খামারটি কিনে নেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেন পি কে হালদার। জামানত হিসেবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন: দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত দেশের প্রথম কুমির খামার

Advertisement

মোহাম্মদ আরিফ আরও জানান, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। চার কোটি ২৮ লাখ মূল্যের বন্ধকি জমির বিপরীতে এখন বকেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে খামারের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে পারছিল না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। এছাড়া অব্যবস্থাপনা, খাদ্য ঘাটতি এবং আর্থিক সংকটের কারণে সময়ের ব্যবধানে খামারে কমতে থাকে কুমিরের সংখ্যা। পরে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গতবছরের মার্চে ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। এতে ড. নাঈম আহমেদ পরিচালক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান।

আরও পড়ুন: কুমিরে সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ

খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান, খামারটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা। ২০২০ সালে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় খামারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। হুমকিতে পড়ে খামারে কুমিরের পরিচর্যা।

Advertisement

তিনি বলেন, ব্যয় মেটাতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় খামারটি ৷ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। 

আরও পড়ুন: কুমির চাষে বছরে আয় ১৫ কোটি টাকা

খামারটি বিক্রি হওয়া প্রসঙ্গে এনাম হক বলেন, ঋণ পরিশোধ না করায় খামারটি বিক্রি করেছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৩৮ কোটি টাকা। খামারটি কিনতে আগ্রহী উদ্দীপন নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। উদ্দীপন বর্তমানে নিলামের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পি কে হালদারের ঋণ।

এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রেপটাইলস ফার্মটি নিলামে তোলা হয়েছিল। খামার অধিগ্রহণের জন্য নিলামের সময় উদ্দীপন সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেয়। বকেয়া ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও খামারটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বেশ আশানুরূপ একটি দাম।

আরও পড়ুন: সম্ভাবনার কুমির চাষে ‘বাধা’ আইনি জটিলতা!

এদিকে খামারটি থেকে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানান রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেডের ম্যানেজার মোহাম্মদ আরিফ। প্রতিটি চামড়ার আন্তর্জাতিক বিক্রয়মূল্য ৫০০-৬০০ ডলার।

২০০৪ সালে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা ৭৫টি কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু হয় খামারটির। খামারটিতে বর্তমানে কুমিরের সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০টি।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এসআর/এমএস