বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ জীবিকার জন্য ইউরোপে আসতে চান। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি খুব আকর্ষণী। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশের ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলে দেখা দিয়েছে দক্ষকর্মীর অভাব।
Advertisement
জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য বাডেন ভ্যুর্টেমবার্গের রসেনস্টাইন। সেখানে ছোট এক কোম্পানিতে কাজ করেন প্রকৌশলী কুঞ্জন প্যাটেল। কোম্পানির নাম রিশ্টার লাইটিং। মোট ১১০ জন কর্মী আছে রিশ্টারে। ৩৪টি দেশ থেকে তারা এসেছেন।
আরও পড়ুন>জাপানে ১০ জনের মধ্যে একজনের বয়স ৮০ বছরের বেশি
ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গের শহর রসেনস্টাইনের বেশিরভাগ মানুষই মাঝবয়সী। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তরুণ-তরুণীরা বড় শহরে চলে যাওয়ার কারণেই সেখানের কারখানাগুলোয় দেখা দিয়েছে কর্মী-সংকট।
Advertisement
ভারত থেকে আসা কুঞ্জন প্যাটেল অবশ্য তারপরও রসেনস্টাইনে থাকতে পেরে খুশি। প্রথমত তার কোম্পানি রিশ্টারে জার্মান বলা বাধ্যতামূলক নয়, ইংরেজিই প্রাধান্য পায় সেখানে। দ্বিতীয়ত প্রচুর বিদেশি রয়েছে রসেনস্টাইন শহরে। ৩০ বছর বয়সী প্রকৌশলী অবশ্য ইস্ট ভ্যুর্টেনবার্গ অঞ্চলকে ভালো লাগার কারণ জানাতে গিয়ে বলেন, প্রকৌশলীদের জন্য এলাকাটা খুব চমৎকার। এখানে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি আছে, একেকটা কোম্পানি একেক রকম।
সাড়ে চার লাখ অধিবাসীর ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গ অঞ্চলে রয়েছে তিনশরও বেশি প্রতিষ্ঠান। সব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত কর্মী থাকলে লোকে লোকারণ্য থাকতো পুরো ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গ। কিন্তু জার্মানির রাজধানী বার্লিনের চেয়ে দ্বিগুণ আয়তনের এলাকাটিতে জনবসতি কিন্তু সেই তুলনায় অনেক কম।
ইস্ট ভ্যুর্টেমবার্গ চেম্বার অব কমার্স-এর মার্কুস শ্মিড্ট মনে করেন, বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের নিতে চাইলেও এসব এলাকার কোম্পানিতে চাকরির বিষয়ে তাদের আগ্রহী করে তোলা খুব কঠিন।
আরও পড়ুন>‘পশ্চিমা মানেই খারাপ, এই ধারণা থেকে বের হতে হবে’
Advertisement
তবে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারে অন্যরকম। হোক না স্টুর্টগার্টের চেয়েও দূরে, তারপরও তরুণ, দক্ষ বিদেশিদের সহজেই পেয়ে যায় তারা। চশমা কোম্পানি সাইস-এর কর্পোরেট হিউম্যান রিসোর্সের প্রধান গেয়র্গ ফন এরফা-র তাই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো দুশ্চিন্তা নেই। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদে দক্ষ লোক রয়েছে।
তিনি বলেন, সব জায়গায় আমরা চাহিদামতো দক্ষ কর্মী পেয়ে গেছি। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে কাজ করি বলেই তা সম্ভব হয়েছে।
রসেনস্টাইনের মতো বাডেনভ্যুর্টেমবার্গের আরেক ছোট শহর হয়বাখেরও এখন একই অবস্থা। বড় শহর ছাড়া জার্মানির প্রায় প্রতিটি শহর বা গ্রামের মতো সেখানেও রয়েছে কর্মী-সংকট। অথচ জার্মানির মোট জিডিপির অর্ধেকই আসে ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চল থেকে। সাম্প্রতিক এক হিসেব অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চল থেকে বছরে মোট আয় হয় প্রায় ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ইউরোর মতো।
তাই হয়বাখের মেয়র জয় আলেমাসুং তার শহরে আরেও অনেক অভিবাসী কর্মী দেখতে চান। তবে তিনি মনে করেন, অভিবাসীদের জন্য জার্মান ভাষায় পটু ও সংশ্লিষ্ট্ কাজে দক্ষ হওয়া অনেক সুবিধাজনক। লেখাপড়া করতে ক্যামেরুন থেকে এসে জার্মানিতেই স্থায়ী হয়ে যাওয়া জয় আলেমাসুং বলেন, কারেও সঙ্গে কথা বলে যদি অন্যরকম না লাগে, তার মানে হলো অনেকটা নিজের ঘরে থাকার মতো অনুভূতি হয়েছে আমার।
আলেনমাগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পরে চাকরিতে যোগ দেওয়া কুন্জন প্যাটেলের কাছে রসেনস্টাইন এখন অনেকটা নিজের বাড়ির মতোই।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এমএসএম