জাতীয়

চাকরির ১০ দিন পরই ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা কর্মচারী

রাজধানী ঢাকার পলাশী কাঁচাবাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পার্টনার হিসেবে ব্যবসা করেন আইনুল হক। গত ২২ আগস্ট মো. শাহিন মোল্যা নামে ২৭ বছর বয়সী এক তরুণকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। মাসের শেষ দিকে কোনো বাসা না পাওয়ায় আইনুল নিজের ভাড়া করা বাসায় শাহিনকে থাকারও ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সুযোগ নিয়ে মাত্র ১০ দিন পরই ব্যাংকের লকার থেকে ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে লাপাত্তা শাহিন। টাকা খুইয়ে দিশেহারা আইনুল।

Advertisement

ঘটনার পর শাহিনের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে না পেরে রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় একটি চুরির মামলা করেন আইনুল হক। পলাতক থাকলেও শাহিনের চারটি ফোন নম্বরের কোনো না কোনোটি খোলা থাকছে। লোকেশনও ট্র্যাক করা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত শাহিনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আইনুল হক চকবাজার মডেল থানাধীন পলাশী কাঁচাবাজারের দ্বিতীয় তলার ১৯৮-২০০ নম্বর দোকান ভাড়া নিয়ে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক আউটলেট পার্টনারের ব্যবসা শুরু করেন। গত ২২ আগস্ট তার প্রতিষ্ঠানে শাহিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১০টার দিকে কাজ শেষ করে ব্যাংকের লকারে টাকা রেখে শাহিনসহ ম্যানেজার মো. তানভীর হোসেন ও আজহার উদ্দিন ব্যাংক বন্ধ করে একসঙ্গে বের হয়ে চলে যান। এসময় ম্যানেজার তানভীর হোসেন ব্যাংকের গেটের চাবি মো. শাহিন মোল্যাকে দিয়ে যান। এর আগে তিনি লকারের মূল চাবি লক না করে বাইরে থেকে শুধু একটি তালা লাগিয়ে চাবির ছড়া পাশের টেবিলে রেখে যান।

আরও পড়ুন>> চলতি বছর রাজধানীতে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই

Advertisement

পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ৯টার দিকে মো. শাহিন মোল্যা ব্যাংকের তালা খুলে একা প্রবেশ করেন। ভিতরে টেবিলের ওপর রাখা চাবি দিয়ে তালা খুলে লকারে থাকা ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা ৫ হাজার ৫০ টাকাসহ মোট ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫০ টাকা চুরি করে পালিয়ে যান। মো. শাহিন মোল্যার বাড়ি মাগুরা সদরের চাউলিয়া ইউনিয়নে। তিনি ধলহরা গ্রামের মো. তুজাম মোল্যার ছেলে।

ঘটনার পর থেকে দিশেহারা আইনুল। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেই উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর নানা চেষ্টায় রাজধানীর পলাশী কাঁচাবাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক আউটলেট পার্টনার হিসেবে তিনি ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ব্যবসা শুরু করেন। বেশ ভালোই চলছিল সব। টাকা চুরি হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন। আইনুল হকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সোহাতা গ্রামে।

আরও পড়ুন>> ফাঁকা ঢাকায় চুরি-ডাকাতির ভয়, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা যান। পারিবারিক কারণে আমি ব্যাংকে অনিয়মিত ছিলাম। গত ২ সেপ্টেম্বর আমি ব্যাংকে ছিলাম না। পরে ৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক বন্ধ পেয়ে আমার কর্মচারী আজাহার উদ্দিনকে ফোন করি। সে ব্যাংকে এলে তাকে নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে চুরির ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানি। এরপর শাহিনের ফোনে কল দিয়ে নম্বর বন্ধ পাই। তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে সিসি ক্যামেরা দেখে নিশ্চিত হই সে টাকা চুরি করে পালিয়েছে। গ্রাহকদের টাকা পাঠিয়ে যে টাকা আমাদের থাকে তা লেনদেন শেষে রেখে যাই। পুরো টাকাটিই আমার নিজের। গ্রাহকদের কোনো টাকা নেই।

Advertisement

ঘটনার পরও দিনভর শাহিন মোল্যার ফোন চালু ছিল। এমনকি ঘটনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলায় উল্লেখ করা চারটি নম্বরের কোনোটি কখনো না কখনো চালু থাকে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন>> অপরাধ বেশি তেজগাঁওয়ে, কম রমনা বিভাগে

আইনুল হক অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তদন্তে গুরুত্ব দিলে এতদিন সময় লাগতো না। কারণ তাকে ঘটনার দিন মুন্সিগঞ্জ, তারপর বেশ কয়েকদিন নড়াইল সদরে নাকি ফোন ট্র্যাকিংয়ে পাওয়া গেছে। তারপরও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।

ঘটনার বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তদন্ত চলমান। আশা করি, আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।

ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ শাহিনের সব তথ্য পুলিশকে দিয়েছেন আইনুল হক। শাহিনের ফোন নম্বর খোলা থাকার পরও এ ধরনের আসামি গ্রেফতার না হওয়া তদন্তের ঘাটতি কি না জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তদন্তে ঘাটতি থাকার কথা নয়। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখছি যেন তদন্ত আরও ভালো করে দ্রুত সম্পন্ন হয়।

আরএসএম/এএসএ/জেআইএম