দেশজুড়ে

৫ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বঙ্গ সোনাহাট রেলসেতুর পাশে পিসি গার্ড সেতুর নির্মাণ কাজ। এতে করে বাধ্য হয়েই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্টিলের রেলসেতু দিয়ে পারাপারে হচ্ছে সোনাহাট স্থলবন্দরের পাথর ও কয়লাবোঝাই ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সেতুর আশপাশের ৪-৫টি ইউনিয়নের ব্যবসায়ীসহ প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষজন।

Advertisement

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৯ সালের ২২ জুলাই বঙ্গ সোনাহাট সেতুর নির্মাণ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। সরকারি চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ নির্মাণ কাজ শুরুর দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ। ফলে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ রেলসেতু দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। তাদের দাবি দ্রুত সোনাহাট সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা হোক।

আরও পড়ুন: ১৬ মাসে ৬৬ সেচ পাম্পের ট্রান্সফরমার চুরি

কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে একনেকে সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কের দুধকুমার নদের ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতুর দক্ষিণে মোট ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪৫ মিটার লম্বা পিসি গার্ডার সোনাহাট সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে সেতুর ১৩টি পিলারের মধ্যে মাত্র পাঁচটি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া সেতুর ৬৪৫ মিটার ডেক্স স্লাবের (সেতুর যে অংশের ওপর দিয়ে চলাচল করা হয়) জন্য ১৪টি স্প্যান তৈরি করতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র একটি স্প্যান তৈরি করতে পেরেছে। সেতুর জন্য ৪৯ দশমিক ৫০ মিটার লম্বা ১০টি স্প্যান এবং ৩৭ দশমিক ২৯ মিটার লম্বা চারটি স্প্যান নির্মাণ করতে হবে। সব মিলিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে সেতুর মাত্র ৩৫ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছে বলে জানান দপ্তরটি।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল গফুর বলেন, নতুন সেতুর কাজে সরকার ঠিকই টাকা ঢালছেন অথচ ঠিকাদার কাজ করছে নাম মাত্র। বছরের পর বছর দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার অজুহাতে দফায় দফায় সেতুর ব্যয় বাজেট বাড়িয়ে লাভবান হচ্ছেন। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি এই ঠিকাদার বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার দিয়ে সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি দূর করুক।

আরও পড়ুন: সেতু নির্মাণের ৬ বছরেও হয়নি সংযোগ সড়ক

তিনি আরও বলেন, নড়বড়ে রেলসেতু দিয়ে পাথর বোঝাই ট্রাক যাওয়ার সময় সেতুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। এছাড়া সরু সেতু দিয়ে যখন একটি ট্রাক যায় তখন পাশদিয়ে অন্য যানবাহন যাওয়ার জায়গা থাকে না। এতে সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে রেলসেতু দিয়ে যেতে না পারায় নৌকায় করে দুধকুমার নদ পার হতে গিয়ে এক গর্ভবতী মা তার সদ্য জাত সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও ছোট ছোট নানা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে।

সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুরোনো সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুটি ভেঙে গেলে স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে নানান পেশার মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি ও ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে।

Advertisement

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামিম রেজা বলেন, সেতুর ডিজাইন সংশোধনের কারণে প্রায় দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কাজ করার পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় নির্মাণ কাজে ব্যাঘাত ঘটেছিল।

আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা-মেঝেতে পানি, বন্ধ পাঠদান

কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসে ওই সেতুটির বিষয়ে ভূমি, সড়ক ও জনপথ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সড়ক বিভাগের সচিব সরেজমিনে সোনাহাট সেতুর নির্মাণ কাজ তদন্ত করে গেছেন। আশা করছি অভ্যন্তরীণ সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/জেএস/এমএস