বোরোর মৌসুম শুরু হয় আমনের মৌসুম শেষ হওয়ার পর। ধান রোপণ শুরু হয় বাংলা কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাস থেকে এবং ধান কাটা চলে বাংলা বৈশাখে। ধান উৎপাদনে বোরো মৌসুম সর্বাধিক উৎপাদনশীল। এ কথা অনস্বীকার্য, বোরোর ওপর ভিত্তি করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি রচিত হয়েছে। দেশের মোট উৎপাদনের ৫৮ ভাগ আসে এ মৌসুম থেকে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বোরো ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১.৫ থেকে ২.০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। যা জাতীয় উৎপাদনে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে এসে কৃষির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র হচ্ছে বোরোর মৌসুম। আসছে ধানের বোরো মৌসুমের ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই!
Advertisement
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট (বিপিবি) রোগবারখোলডেরিয়া গ্লুমা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট ব্যাকটেরিয়া জনিত দানা পঁচা রোগ বা দানা নামেও পরিচিত। ব্যাকটেরিয়াটি হলুদ পিগমেন্টেড বিষাক্ত টক্সোফ্লাভিন উপাদান নিঃসৃত করে ফলে এ রোগ ছড়ায়। এছাড়া আর্দ্রতা ৮০ শতাংশের ওপরে, খুব ঘন আকারে চারা রোপণ ও অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার এ রোগের প্রার্দুভাব বাড়ায়।
রোগের লক্ষণব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট (বিপিবি) রোগে পূর্ব কোনো সতর্কতা ছাড়াই লক্ষণগুলোর উপস্থিতি দেখা যায়। শীষের ছোট ছোট ধানগুলো সঠিকভাবে দানা বাধতে পারে না এবং চিটা হয়ে যায়। তবে শীষের সব দানা চিটা হয় না। আক্রান্ত ধানের দানাগুলো ধূসর বা কালো বা গোলাপি রং ধারণ করে। শীষে চিটা হওয়ার ফলে ওজন থাকে না বিধায় শীষগুলো খাড়া হয়ে থাকে। সংক্রমিত শীষের নিচের অংশ সবুজ থাকে। মাঝে মাঝে খোলপচা বা চারা ঝলসানো রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি জায়গায় এক বা একাধিক গাছে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: শঙ্কা কাটিয়ে মিরসরাইয়ে আমন চাষে ব্যস্ত কৃষক
Advertisement
কীভাবে ছড়ায় ব্যাকটেরিয়াগুলো ধানগাছের পাতা এবং খোলে অবস্থান করে। তারা প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। ধানগাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াগুলো গাছের ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ব্যাকটেরিয়াটি ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে সেখানে আক্রমণ করে। ফুলের রেণুগুলো নষ্ট করে ফলে ধানের দানাগুলো চিটায় পরিণত হয়।
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট সাধারণত গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি ছড়ায়। যখন দিনের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে এবং রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে এরকম আবহাওয়া এ রোগ ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহার এ রোগের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
বিপিবি বাহক ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট একটি বীজ বাহিত রোগ। রোগাক্রান্ত বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে আবাদ করলে তা নিয়ন্ত্রণের বাস্তবিক কোনো উপায় নেই।
আরও পড়ুন: শার্শায় রোপা আমন চাষ নিয়ে চিন্তায় কৃষকেরা
Advertisement
বিপিবি দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা১. আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি যেমন বীজ বপনের পূর্বে তা শোধন করা। ২. বীজ বপনের পূর্বে ৫-৬ দিন কড়া রোদে বীজ শুকিয়ে নেওয়া। ৩. অক্সালিনিক অ্যাসিড দিয়ে বীজ শোধন করা। বাংলাদেশে এ জাতীয় বালাইনাশক বাজারে নেই। ৪. রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষাবাদ করা। জাপান এরই মধ্যে ৯টি এবং আমেরিকা ৬টি প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করেছে। ৫. সঠিক নিয়ম মেনে ধানের চারা রোপন করা।৬. সঠিক নিয়ম মেনে ধানের সার ও সেচ দেওয়া।৭. জমিতে পর্যাপ্ত পটাশ সারের প্রয়োগ করতে হবে। যা এ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।৮. অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা। ৯. লক্ষণ দেখা মাত্র ১০ লিটার পানি ৬০ গ্রাম পটাশ সার, ৬০ গ্রাম সালফার, ২০ গ্রাম দস্তা দিয়ে স্প্রে করতে হবে ৫ দিন পরপর ২-৩ বার।
আরও পড়ুন: সাবুদানা কী? এটি কীভাবে তৈরি হয়?
বিপিবি দমনে রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা১. কাবেন্ডাজিম-এগবেন, ডাইক্লোরান-আনিলিন (বাজারে পাওয়া যায়) এ জাতীয় বালাইনাশক প্রয়োগ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২. ব্যাকটেরিসাইড অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
লেখক: লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, ঢাকা।
এসইউ/এমএস