খেলাধুলা

বাংলাদেশের কাছে হার, ভারতের পচা শামুকে পা কাটা?

এবারই যে প্রথম বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তা নয়, এ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে ৮বার বার পরাজিত করেছে টাইগাররা। দু’বার সিরিজও জিততে পেরেছিলো বাংলাদেশ। ভারতকে এই কিছুদিন আগেও (২০২২ সালের ডিসেম্বরে) সিরিজে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ।

Advertisement

এই এশিয়া কাপেও বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়েছে। এটা ঠিক যে, সব সময়ই ভারত শক্তিশালী একটি দল। এবারের এশিয়া কাপেও সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। কিন্তু সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ৬ রানে হারতে হলো ভারতকে। শুভমান গিল ১২১ করেও দলকে জেতাতে পারেননি।

ফাইনালের আগে বাংলাদেশের কাছে এই পরাজয় নিঃসন্দেহে ভারতীয়দের গর্বে আঘাত হেনেছে। তাই বলে অন্য দেশের ক্রিকেটকে তো কোনোভাবেই হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে না তারা! অথচ, ভারতীয় পত্রিকা বিশেষ করে, কলকাতার বাংলা পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের কাছে ভারতের এই হারকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

বাংলাদেশের কাছে হারের পর কলকাতার জনপ্রিয় কোনো কোনো পত্রিকা যেভাবে লিখেছে, সেটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আহত করেছে বেশি। একটি জনপ্রিয় পত্রিকা ‘৫ কারণ: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপে কেন হারল ভারত?’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রথম লাইনটিই তারা শুরু করেছে, ‘পচা শামুকে পা কাটল রোহিত শর্মাদের’- দিয়ে।

Advertisement

পত্রিকাটির ওই লাইনটির স্ক্রিনশট শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ জানাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। গাজী মিজানুর নামে এক ক্রিকেটভক্ত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহুল পঠিত "আনন্দবাজার পত্রিকা" এর সংবাদটা দেখে গা শিউরে ওঠল! তারা নিজেদের কী ভাবেন? "পচা শামুকে পা কাটল রোহিত শর্মাদের।" এইভাবে কেউ বলতে পারে? এটা কোন ধরনের শিষ্টাচার? আবার ছবির নিচের ক্যাপশনটা খেয়াল করেছেন? "শার্দূলকে ফিরিয়ে উচ্ছ্বসিত মুশফিকুর"। অথচ মুশফিকুর রহিম ভারতের সাথে লাস্ট ম্যাচে খেলেননি। মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খেয়ে নি*উ*জ করেছে কি?’

প্রায় একই ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছে অনেক ক্রিকেট ভক্তই। আবার কারো কারো ক্ষোভ-প্রতিক্রিয়া এমন পর্যায়ে গেছে যে আনন্দবাজার পত্রিকাকে স্রেফ গালি দিয়েও বসেছে তারা। যা উল্লেখ করার মত নয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়। ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। সেটি ছিল বাংলাদেশের শততম ম্যাচ। মাশরাফির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ১৫ রানে জয় পেয়েছিলো সৌরভ গাঙ্গুলির দলের বিপক্ষে। ২০০৭ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হেরেছিলো ভারত। সেবারও মাশরাফি ছিলেন সেরা পারফরমার। ৫ উইকেটে জিতেছিলো টাইগাররা।

বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় জয়টি পেয়েছিলো ২০১২ এশিয়া কাপে। শচিন টেন্ডুলকার ওই ম্যাচে তার ক্যারিয়ারে শততম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন। গৌরবোজ্জ্বল ম্যাচটি শচিন রাঙাতে পারলেন না জয় দিয়ে। ২৮৯ রান করেও বাংলাদেশের কাছে হেরেছিলো ৫ উইকেটে। ২০১৫ বিশ্বকাপে মেলবোর্নে ন্যাক্কারজনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলো ভারত। রোহিত শর্মার আউটটিকে নির্লজ্জভাবে ‘নো বল’ ঘোষণা দিয়েছিলো। না হয় ওই ম্যাচেও বাংলাদেশ জিততে পারতো।

Advertisement

বিশ্বকাপের পরই ঘরের মাঠে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে পরাজিত করে টাইগাররা। ওটা ছিল ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। ২০২২ এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশে খেলতে এসেও ২-১ ব্যবধানে হেরেছে রোহিত শর্মারা। এবার এশিয়া কাপেও হারতে হলো তাদের।

দু’দলের পরস্পর মুখোমুখি হওয়া ৪০ ম্যাচের মধ্যে ৮টি জয় বাংলাদেশের। ৩১টি ভারতের। একটি ফল হয়নি। পরিসংখ্যানও বলছে, নিঃসন্দেহে ভারত শক্তিশালী। তাই বলে, বাংলাদেশও ৮টি ম্যাচ জিতেছে। সে হিসেবে, টাইগারদের কাছে হেরে যাওয়া ভারতের কিভাবে ‘পচা শামুকে পা কাটা’ হয়?

আইএইচএস/