দেশজুড়ে

ভাগ্য বদলে বিদেশমুখী হাওরের কৃষক-তরুণ

ভাটির জেলা সুনামগঞ্জের মানুষ কৃষিকাজ ছেড়ে ছুটছেন বিদেশে। ফলে ভাগ্য বদলের আশায় বিদেশ যেতে পাসপোর্ট তৈরির হিড়িক পড়েছে হাওর-বাওড়ের এ জেলায়। গত দুই বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে পাসপোর্টের আবেদন। আবেদনকারীদের বেশিরভাগই কৃষক-তরুণ বলে জানা গেছে।

Advertisement

ভাটির জেলাখ্যাত সুনামগঞ্জের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু কৃষিকাজ করে কোনো রকমে খেয়ে জীবন পার করা গেলেও ভাগ্য বদলানো যায় না বলে ধারণা এ জেলার মানুষের। তাই এখন ভাগ্য বদলের জন্য বাপ-দাদার কৃষি জমি ফেলে গ্রামের কৃষক ও তরুণরা বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বলে জানা গেছে।

‘২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৯৬৬ আবেদন করলে পাসপোর্ট হয় ৬৩ হাজার ৪২৫ জনের। যা গত দুই বছরের তুলনায় কয়েকগুণ’

সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের তথ্য মতে, গত ৩ বছরে সুনামগঞ্জে মোট পাসপোর্টের আবেদন করেছেন ৬৭ হাজার ১৮৪ জন। এরমধ্যে পাসপোর্ট হয়েছে ৬৫ হাজার ৩৯৫ জনের। তবে সময়ের পরিক্রমায় দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে।

Advertisement

২০-২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জে পাসপোর্টের আবেদন করেন ৩৮৫ জন, যার মধ্যে পাসপোর্ট হয় ৩০৭ জনের, ২১-২২ অর্থবছরে ১৮৩৩ জন আবেদন করলে পাসপোর্ট হয় ১৬৬৩ জনের এবং সর্বশেষ ২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৯৬৬ পাসপোর্টের আবেদন করলে পাসপোর্ট হয় ৬৩ হাজার ৪২৫ জনের। যা গত দুই বছরের তুলনায় কয়েকগুণ।

আরও পড়ুন: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিশুরা

তবে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সুনামগঞ্জে ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে কৃষক রয়েছেন ১২ লাখ। গত ৫ বছরে সুনামগঞ্জের এই হাওরগুলো থেকে শুধু বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকার ও আমন ধান উৎপাদিত হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার। গত ৫ বছরে ৩০ হাজার তরুণ ও ২০ হাজার কৃষক ভাগ্য বদলের আশায় কৃষিকাজ ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাড়ি দিয়েছেন। হাওর এলাকায় এখন বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকায় আগামীতে এই জেলায় ধান উৎপাদনে এর প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে হাওর এলাকার বাসিন্দারা জানান, হাওরের কৃষকরা ভাগ্য বদলের চেষ্টা করেও পারছেন না। অনেকে বিদেশে গিয়েও হতাশ হয়ে দেশে ফিরে বেকার ঘুরছেন।

Advertisement

‘হাওর এলাকায় এখন বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকায় আগামীতে এই জেলায় ধান উৎপাদনে এর প্রভাব পড়তে পারে’

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার বাসিন্দা মুন্না মিয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার রেখে যাওয়া কৃষি জমিতে কাজ করেই সংসারের হাল ধরেছেন। তবে কৃষিকাজে তেমন লাভবান হতে না পারায় বড় ভাই রাসেল মিয়াকে দেড় বছর আগে ৫ একর জায়গা চড়া সুধে বন্দক দিয়ে ও ৫০ মণ ধান বিক্রি করে ৪ লাখ টাকায় সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। কিন্তু দালালের কথা অনুযায়ী সেখানে কাজ না পাওয়ায় দেশে তেমন একটা টাকা পাঠাতে পারছেন না রাসেল। যে টাকা পাঠাচ্ছেন তা দিয়ে ভাগ্য বদলতো দূরের কথা ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন সেটাই ভাবছেন ছোটভাই মুন্না।

মুন্না জাগো নিউজকে বলেন, ভাগ্য বদলের আশায় বড় ভাইকে দেশের বাইরে পাঠিয়েছিলাম। অথচ সেটা আর হলো না। তাই ভাইকে বলেছি কোনো রকমে ঋণ পরিশোধ করেই দেশে আশার জন্য।

আরও পড়ুন: স্যালাইন সংকট, একটির বেশি কিনতে পারছেন না রোগীরা

শুধু রাসেল নয়, এভাবে দেশের বাইরে ভাগ্য বদলাতে গিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছেন হাওর এলাকার অধিকাংশ মানুষ।

তবে কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য আরও আধুনিক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে জানিয়ে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা যাতে বিদেশে না গিয়ে দেশেই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষিকাজ করে লাভবান হতে পারেন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গত ৫ বছর যাবৎ সুনামগঞ্জে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে এবং ফসলের বাজারমূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

এফএ/এএইচ/এএসএম