রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে আগুনে পুড়েছে শতশত দোকান। রাতের অন্ধকারে আগুনের লেলিহান শিখায় ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই। কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তারা। অনেকটা অসহায়ের মতো চোখের সামনে পুড়েছে তিল তিল করে সাজানো স্বপ্ন। রাতের অন্ধকারে পেড়িয়ে দিনের আলো ফুটতেই স্পষ্ট হয়েছে ক্ষতির পরিমাণ। তবুও বৃহস্পতিবার দিনভর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ছাঁইয়ের স্তপের ভেতরে খোঁজার চেষ্টা করেছে যদি অক্ষত পণ্য বা নগদ টাকা মেলার আশায়।
Advertisement
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে পোড়া দোকানে এসে আবারও ধাক্কা খেলেন। আগুনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মালামাল যা ছিল সবই লুট হয়ে গেছে। বিশেষ করে কৃষি মার্কেটের নতুন কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে হরিলুট করেছেন স্থানীয়রা।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে, অনেকেই সহযোগিতার নামে লুট করেছে। আবার অনেকে দোকান থেকে বের করে রাখা মাল নিয়ে গেছে।
কৃষি মার্কেটের নিউ কাঁচাবাজারের আলী স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, আগুন নেভার পরে দেখি দোকানের বেশিরভাগ মালামাল আগুন ও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে যেসব মাল পেয়েছি সেগুলো গুছিয়ে রেখে গেছি। আজ সকালে এসে দেখি বেশিরভাগই চুরি হয়ে গেছে। কে কীভাবে নিয়ে গেছে বলতে পারছি না। এগুলা যেন এখন লুটের মাল। অন্ধকারে তো দোকানে ঢোকা যায় না। কিন্তু সকালে আসার আগেই সব নিয়ে গেছে। এমন কি পুড়ে যাওয়া তার, লোহার এঙ্গেলসহ সব নিয়ে গেছে।
Advertisement
তিনি বলেন, এক দোকান থেকে সরিয়ে দিলে আরেক দোকানে যাচ্ছে। তাদের কেউ ফেরানোর নেই। বস্তায় ভরে সব নিয়ে যায়। আমরা তো নিঃস্ব হয়ে গেছি। কিন্তু এরা এখন আবার পোড়া ঘায়ে আঘাত দিচ্ছে।
চাঁদপুর স্টোরের মালিক শারমিন আক্তার বলেন, আমাদের খ-১৯ ও খ-৩০ নম্বর দোকান। তিন বোন মিলে এ দোকান চালাতাম। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এরপর ছাঁইয়ের নিচে যা পেয়েছি সেগুলো গুছিয়ে এক পাশে রেখেছি। সাটার লাগানো ছিল। কিন্তু সকালে এসে দেখি কিছুই নেই। সাটার খুলে সব নিয়ে গেছে। সাবানের গুড়া, চিনির বস্তাসহ বিভিন্ন মালামাল রাখা ছিল।
অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে অনেকেই এসেছে। তারাও ভালো ভালো মালামাল বের করে নিয়ে গেছে। উদ্ধার করার নামে নিয়ে গেছে। আবার বের করে দোকানের বাইরে রাখা মালামালও নিয়ে গেছে।
শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কৃষি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ ও ছোট বড় ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন দোকানের ছাঁই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ লোহার এঙ্গেল, পাইপ নিয়ে যাচ্ছেন। মুদি দোকানগুলোতে সব বেশি ভিড় দেখা গেছে। বিরক্ত ব্যবসায়ীরা। সরিয়ে দিলেও তারা সরছেন না। তাদের বেশিরভাগই পাশের বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা।
Advertisement
অন্যদিকে, আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া চাল, ডাল, আলু, লবণ, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
আগুনের কারণে ধোঁয়ার গন্ধ ও ভেজা এসব পণ্য নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছেন তারা। সাধারণ সময়ের ৮০ টাকার চাল এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বস্তা বিক্রি করছেন মাত্র ৭০০ থেকে হাজার টাকায়। আর এসব পণ্য কম দামে কেনার আশায় অনেকেই ভিড় করছেন। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
টিটি/এমএএইচ/এএসএম