মতামত

প্রাণঘাতী ইউপি নির্বাচন

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে আছে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতা। সেটা জাতীয় নির্বাচনই হোক, আর স্থানীয় নির্বাচনই হোক। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কিংবা কার অধীনে হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনই সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায়ই দেশে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার পর এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও দলীয়ভাবে হচ্ছে। গতকাল প্রথমধাপে দেশের ৭১২টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। প্রথম ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা, জালভোট, কেন্দ্রদখল , নির্বাচন বর্জনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে নির্বাচনী সহিংসতায় ১১ জন নিহত হয়েছে। এক পিরোজপুরেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৫ জন। এছাড়া অন্যান্য স্থানেও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নির্বাচন সহিংসতামুক্ত রাখা যায়নি।  প্রাণঘাতী এই নির্বাচন তাই ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত দিচ্ছে। কথায় আছে উদিত সূর্যই নাকি বলে দেয় দিনটি কেমন যাবে। ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর নানা অভিযোগ আছে। ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে কমিশন এ অভিযোগ থেকে অনেকটাই মুক্তি পেত। কিন্তু সেটি হয়নি। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি দলীয় প্রতীকের ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা ইউপি নির্বাচনে সমতল ক্ষেত্র নির্মাণের কথা বার বার বলে আসছিল। এই দাবি অপরাপর দলগুলোরও। সর্বশেষ অন্তত ৫০ ইউপিতে পুনরায় ভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। অন্যান্য দল ও প্রার্থীরও অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই ভাবতে হবে। এবং সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা আইনভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সরকারকেও মনে রাখতে হবে যখন সংকটের মূলে নির্বাচন ব্যবস্থা তখন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হতে। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। কারণ এটা সরকারের সাংবধিানিক দায়িত্ব। এইচআর/পিআর

Advertisement