বাওয়াছড়া কৃত্রিম লেক ও পাহাড়ি ঝরনা উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট। সৌন্দর্যের সঙ্গে অপরূপ সৌন্দর্যের মিতালি। পাহাড়ি ঝরনার মুখে বাঁধ, সবুজ গাছের সমারোহ, পরিযায়ী পাখিদের কলতান। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের লোকজন মুগ্ধ হবেন বাওয়াছড়া দেখে। এ স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।
Advertisement
মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুরে পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থিত। অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য। দুপাশে সুউচ্চ পাহাড়। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে পড়ছে লেকে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অঝরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারো মনে নাড়া দেবে।
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান করছেন। ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে। পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত হরিণমারা, হাঁটুভাঙ্গা ও আমতলি ঝরনায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ‘মানিকছড়ি ডিসি পার্কে’
Advertisement
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। সবুজ শ্যামল আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ পেরিয়ে বারোমাসি ছড়ার মুখে তাই লেকটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাওয়াছড়া লেক’। এর মধ্যে সামান্য পথ ছাড়া বাকি পথ গাড়িতে যাওয়া যায়।
স্থানীয়দের বাড়ি ও ক্ষেতের আইলের পাশে বেড়ে নানা সবজি ও ফলের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকেরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল! যতদূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে; ততদূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক, অচেনা পাখির ডাক। লেকের ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। অনেকে ছোট বোট নিয়ে লেকে ঘুরে বেড়ান।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বেড়াতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে প্রথমবার এসেছি। অনেক সুন্দর জায়গা। তবে এখনো পর্যটন অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সরকার একটু নজর দিলেই এটি হবে চট্টগ্রামের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র।’
আরও পড়ুন: কম খরচে কীভাবে ঘুরবেন পান্থুমাই জলপ্রপাতে?
Advertisement
পর্যটক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘একে ইকো ট্যুরিজমের আওতায় এনে উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিলে ভবিষ্যতে এটি সম্ভাবনাময় জায়গা হবে। এখানে কেউ বাস্তবে না এলে বুঝতে পারবে না যে, জায়গাটা কতটা সুন্দর। সরকার উদ্যোগ নিলে আরও পর্যটক আসবে।’
জানা গেছে, ২০০৫ সালে এলজিইডির অধীনে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রাকার সেচ প্রকল্পের আওতায় বাওয়াছড়া লেক স্থাপন করা হয়। তৎকালীন ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিমের চেষ্টায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
কীভাবে যাবেনদেশের যে কোনো জায়গা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ছোটকমলদহ বাজারের দক্ষিণ পাশে নেমে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে প্রকল্পের অবস্থান। সড়কের মূল প্রবেশমুখে প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। যে কোনো ছোট গাড়ি নিয়ে প্রকল্প পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: জবই বিল পর্যটকদের কাছে ‘মিনি কক্সবাজার’
থাকা-খাওয়ালেকের ২শ গজের মধ্যে আছে ‘বাওয়াছড়া লেক রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট’। এখানে একসঙ্গে ১০ জন থেকে শুরু করে ৩০০ জন খেতে পারবেন। এছাড়া কমলদহ বাজারে আছে ‘ড্রাইভার’ হোটেল। এখানে থাকার ব্যবস্থা না থাকলেও প্রকল্প এলাকা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য আছে রিসোর্ট।
এসইউ/জিকেএস