মতামত

কর্ম হোক শ্রেষ্ঠ

মানুষকে আল্লাহপাক শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। তাই শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমার কথা, কাজ সবকিছুর মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে- এটাই আল্লাহপাকের ইচ্ছা। আমার কর্ম যদি খারাপ হয়, তাহলে এই শ্রেষ্ঠত্বের কোনো মূল্য নেই।

Advertisement

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এটাই ইচ্ছা করেন যে, তার বান্দারা যেন সব ধরনের অন্যায় আচরণ থেকে মুক্ত থাকে, কারও সঙ্গে জুলুম না করে এবং তার দ্বারা যেন কোনো ধরনের মন্দ কর্ম সংঘটিত না হয়। নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আমার কথা ও কাজ দ্বারা সৃষ্টির কেউ কোনো ধরনের কষ্ট না পায়। আমি যদি নিজেকে একজন আল্লাহপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।

একটি হাদিস রয়েছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনকে গালাগাল করা বিদ্রোহাত্মক কর্ম আর তার সঙ্গে লড়াই করা কুফর’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, প্রথম খণ্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা, বৈরুতে মুদ্রিত)। অন্য একটি হাদিসে হজরত আবদুর রহমান বিন শিবল বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা দুষ্ট প্রকৃতির হয়। বর্ণনাকারী বলেন, নিবেদন করা হলো, ‘হে রাসুলুল্লাহ (সা.)! আল্লাহতাআলা ব্যবসা-বাণিজ্য কি বৈধ করেননি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘কেন নয়? কিন্তু তারা যখন বেচাকেনা করে তখন মিথ্যা বলে আর কসম খেয়ে খেয়ে মূল্য বাড়ায়।’

বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘পাপাচারীরা নরকবাসী’। নিবেদন করা হলো ‘হে রাসুলুল্লাহ (সা.)! পাপাচারী কারা?’ এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নারীরাও পাপাচারী হয়ে যায়।’ একজন ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে রাসুলুল্লাহ (সা.)! ওরা কি আমাদের মাতা, ভগ্নি আর সহধর্মিণী নয়?’ মহানবি (সা.) উত্তরে বললেন ‘কেন নয়! তবে তাদের কিছু দেওয়া হলে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না আর তাদের ওপর যখন কোনো পরীক্ষা আপতিত হয় তখন তারা ধৈর্যও ধারণ করে না’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪২৮ পৃষ্ঠা, বৈরুতে মুদ্রিত)।

Advertisement

এখানে সেসব ব্যবসায়ীর ভেবে দেখা দরকার, যারা মানুষকে ঠকায়, মাপে কম দেয়, মজুত করে অধিক লাভ করে, খারাপ জিনিস দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্য খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন হওয়া উচিত, সৎ থাকা চাই।

আমাদের মধ্যে কিছু লোকের অভ্যাস এমনও আছে, যারা বিভিন্নভাবে লোকদের প্রতি জুলুম করে থাকি আর কোনো ক্ষমতার অধিকারী হলে তো কথাই নেই। যারা বিভিন্নভাবে লোকদের প্রতি জুলুম করে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহতাআলা সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল মতভেদ করে। অতএব ওই লোকদের জন্য, যারা জুলুম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এক কষ্টদায়ক দিনের আজাবের দুর্ভোগ’ (সুরা আজ জুখরুফ, আয়াত : ৬৫)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত নবি করিম (সা.) বলেন, ‘জুলুম-নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কিয়ামত দিবসে তোমার কৃত জুলুম অন্ধকাররূপে ধেয়ে তোমার সামনে এগিয়ে আসবে। লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে দূরে থাকো, কেননা লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা আত্মমর্যাদাকে আক্রান্ত করে হত্যা করায় উসকিয়ে দেয় আর সম্মানজনক বস্তুর মানহানি ঘটায়’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, তৃতীয় খণ্ড, ৩২৩ পৃষ্ঠা)।

আমরা যদি কারও অধিকার হরণ করি তাও কিন্তু জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ বর্ণনা করেন, আমি মহানবির (সা.) কাছে নিবেদন করি, ‘হে রাসুলুল্লাহ (সা.)! কোন জুলুমটি সবচেয়ে বড়?’ উত্তরে হজরত নবি করিম (সা.) বললেন, ‘সব থেকে বড় অন্যায় এটা যে, কোনো ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রাপ্য অংশ থেকে একহাত পরিমাণ জমি জবরদখল করে। এমনকি ওই জমির এক টুকরো পাথরও যদি সে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিয়ে থাকে, তবে পাথরের তলার ওই জমিটুকু পরিপূর্ণ আকারের এক কাঁটায় পরিণত করে কিয়ামত দিবসে তার গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। আর জমির তলদেশে কী লুকানো আছে তা ওই পবিত্র সত্তা ব্যতিরেকে কেউই জানে না, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৬, বৈরুতে মুদ্রিত)।

Advertisement

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মহানবি (সা.) এর অতুলনীয় জীবনচরিতের সুমহান আদর্শসমূহ ধারণের মধ্যেই প্রকৃত শান্তি, কল্যাণ ও সফলতা নিহিত। ইহকাল ও পরকালের উন্নতি ও মুক্তির যে পথ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন, কর্ম, চরিত্র সে আলোকিত পথের বাস্তব নমুনা।

আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে শ্রেষ্ঠনবির অতুলনীয় জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন। লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এমএস