আন্তর্জাতিক

রাজনীতিবিদদের উদাসীনতায় মূল্য দিতে হয় জনগণকে

মরক্কোয় সম্প্রতি ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এটি ছিল দেশটিতে গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকেশে। সেখানের অধিকাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে অন্তত দুই হাজার ৯০০ জন।

Advertisement

মরক্কোর এই মর্মান্তিক ঘটনার পরপরই ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে। এরপর সেখানে ভারী বৃষ্টির ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। ভেঙে যায় বেশ কিছু বাঁধ। ভেসে যায় বাড়িঘর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বন্দর শহর দেরনা। এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি মানুষ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে। নিখোঁজ হাজার হাজার।

মরক্কো ও লিবিয়ার মধ্যে মিল খুব সামান্য। মরক্কোর রাজতন্ত্র খুবই স্থিতিশীল। ১৭ শতাব্দী থেকে একই পরিবারের লোকজন দেশটি শাসন করছে। অন্যদিকে লিবিয়ায় একটি নয় দুটি সরকার। একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, অন্যটি বিদ্রোহী। এর কোনোটিই যথাযথভাবে রাষ্ট্রের মৌলিক কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারছে না। মরক্কো হচ্ছে একদিকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় অন্যদিকে ইউরোপের জন্য উৎপাদনকেন্দ্র। লিবিয়া হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ। তবে জ্বালানি তেলের বড় উৎপাদক। দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ভূমিকা শোচনীয়।

মরক্কো একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। সম্প্রতি বিল্ডিং কোড কঠোর করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনেক বাড়িই সাধারণ রাজমিস্ত্রি দ্বারা তৈরি, যা ভূমিকম্পের সময় সহজেই ভেঙে যেতে পারে। এই মাসের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা তাদের ঘরগুলো পুনর্নিমাণ করার সামর্থ্য রাখে না। বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গ্রামের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজনের আয় দিনে ৩ দশমিক ৬৫ ডলারের কম।

Advertisement

আরও পড়ুন>লিবিয়ার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৬০০০, বাড়তে পারে দ্বিগুণেরও বেশি

শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পরই কয়েক ডজন দেশ মরক্কোকে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য, কাতার, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া বাকিদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশটি। দেশে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় ফ্রান্সের একটি দাতব্য সংস্থাকে। জার্মানির সহযোগিতার প্রস্তাবকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

মরক্কোর রাজা অধিকাংশ সময়ই প্যারিসে কাটান। এমনকি ভূমিকম্পের সময় তিনি কোথায় ছিলেন তা জানানে দেশটির জনগণ। বিধ্বস্ত মারাকেশ ভ্রমণে তার লেগে যায় পাঁচদিন।

মরক্কোর পদক্ষেপকে যদি ধীর বলা হয়, তাহলে লিবিয়ার ক্ষেত্রে বলা যায় চরম বিশৃঙ্খল ও উদ্বেগজনক। ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল সম্পর্কে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। লিবিয়ায় আঘাত হানার আগে ভারী বৃষ্টি হয় গ্রিসে।

Advertisement

আরও পড়ুন>লিবিয়ার বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০০ বিদেশি

ঘূর্ণিঝড়টি যখন দেরনার কাছাকাছি তখনই দেরনার মেয়র পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের কমান্ডার খলিফা হাফতারের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়রের কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি হাফতার। এমনকি যখন বাঁধ ভেঙে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তখনও মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অনেকেই মনে করছেন দেরনা তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় খুব একটা অখুশি নন হাফতার।

এমএসএম