জাতীয়

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।

Advertisement

তিনি বলেন, ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকায় ও মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। এখানে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই মার্কেটটি অনেকটা বঙ্গবাজার মার্কেটের মতো। দোকানের সামনেও দোকান ছিল।

আরও পড়ুন: ৫০০ দোকান পুড়ে ছাই, দাবি ব্যবসায়ীদের

Advertisement

তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ৯ মিনিটের মাথায় চলে আসি। রাত ৩টা ৫২ মিনিট থেকে আমরা আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করি। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি। ১৭টি ইউনিটে ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছেন। আমাদের সঙ্গে বিজিবি-পুলিশ-র‌্যাব-সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী সহযোগিতা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগা এই মার্কেটটিতে কোনো সেফটি প্ল্যান নেই। এই মার্কেটটিতে বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেয়নি। এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার মতো। এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে হয়েছিল ছোট ছোট কিন্তু ভেতরে যত রাস্তা এবং বাইরের যে ছোট ছোট রাস্তা, পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে দিয়ে গাদাগাদি করে রাস্তাটা বন্ধ করা ছিল। পুরো মার্কেট টাইট কলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল।

তাজুল ইসলাম বলেন, এখানকার নাইটগার্ড যারা ছিলেন তারা বাইরে ছিলেন। তাদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি তেমন একটা। ফায়ার ফাইটারদের ভেতরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তালা ভেঙে এবং কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে যেয়ে তারপর আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করি। এ মার্কেটের বাইরেও রাস্তাগুলো দখল করা ছিল। দোকানের সামনে ছোটখাটো দোকান আমাদের একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর জন্য আমাদের বেগ পেতে হয়। আমরা আসার পরই আগুনের মাত্রা অনেক বেশি দেখেছি। একটা পর্যায়ে মার্কেটের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ সম্পূর্ণ আগুন ধরে যায় এবং আমরা চেষ্টা করি এই মার্কেটের ভেতরে যেন আগুনটা আবদ্ধ থাকে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আগুনটাকে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে।

আরও পড়ুন: ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে: ফায়ার কর্মী

Advertisement

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবারে গণসংযোগ করি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদের ডেকে অনেকবার আলোচনা করেছি, অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ তাদের ডেকে আমরা বুঝিয়েছি সচেতনতার প্রোগ্রাম আমরা কীভাবে করবো। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিং উনাদেরকেই করতে হবে। এই মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ইকুইপমেন্টই ছিল না। কোনো ধরনের পানির উৎস ছিল না। আমরা সবচেয়ে বেশি বেগ পেয়েছি পানির উৎসের জন্য। এখানে বিভিন্ন ভবনে পানির উৎস রয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। খুব দ্রুত আমাদের পানি শেষ হয়ে যায়। আমরা বিশেষ পানিবাহিত গাড়ি এনে এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় আমরা এই কার্যক্রমগুলো করি।

আগুন নেভানোর এত সময় লাগার আরও বড় কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগুন নেভানোর আরেকটি বড় কারণ ছিল মানুষের ভিড়। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের পুলিশ বিজিবি তারা খুবই হিমশিম খেয়েছে। এই ভিড়ের কারণে আমাদের এত সময় লেগেছে। যদিও মানুষ চেষ্টা করতে চায় আমাদের সহযোগিতা করার জন্য কিন্তু আদৌ এটা আমাদের অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ১৮ সোনার দোকান পুড়ে ছাই

তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত আমরা তদন্ত করে দেখার চেষ্টা করবো জানার জন্য। তবে যতটুকু বুঝেছি মুদির দোকানের যেই অংশটি ছিল ওই অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যারা ছিল তাদের দু-একজন কিছুটা আহত হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের হতাহতের তথ্য নেই।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন। এর আগে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপণ সাহায্যকারী দল।

আরও পড়ুন: ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন কৃষি মার্কেট, বিস্ফোরণ হচ্ছে দাহ্য পদার্থ

আগুনে মার্কেটের প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেট ও কাঁচা বাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৭০০-৮০০টি দোকান ছিল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথমে হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে বাতাসে মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেনি। এজন্য আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

কৃষি মার্কেটে কাপড়ের দোকানি মাহবুব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, তার দোকানে লাখ পাঁচেক টাকার মালামাল ছিল। প্রথমে হক বেকারিতে আগুন লাগে। পরে সেই আগুন ছড়িয়ে যায়। মার্কেটে ৫০০ এর বেশি দোকান পুড়েছে।

আরএসএম/বিএ/এএসএম