আন্তর্জাতিক

বন্যা-খরায় ৬৫০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হারাবে বাংলাদেশসহ ৪ দেশ

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ভয়ংকর হুমকির মুখে রয়েছে এশিয়ার পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো। কেবল তীব্র দাবদাহ এবং বন্যার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হারাতে পারে এ অঞ্চলের চারটি দেশ, যার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা শ্রোডারস এবং নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এই তথ্য। খবর রয়টার্সের।

Advertisement

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম- এই চার দেশে কার্যক্রম চালানো ছয়টি বৈশ্বিক পোশাক ব্র্যান্ডের সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। ব্র্যান্ডগুলোর নাম অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি।

আরও পড়ুন>> গলে যাচ্ছে হিমালয়ের বরফ, ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ছয়টি সংস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন- একটি ব্র্যান্ডের সর্বমোট বার্ষিক মুনাফা পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

Advertisement

প্রতিবেদনের লেখকরা বলেছেন, বিপুল আর্থিক খরচের সম্মুখীন পোশাক শিল্প এবং কোম্পানিগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য গবেষণার এই ফলাফল একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।

কর্নেল গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জেসন জুড বলেন, আমরা সরবরাহকারী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ দুটি বিষয়ে (তাপ ও বন্যা) কারোরই নজর নেই।

আরও পড়ুন>> ২০৫০ সালের মধ্যে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে ঘরের বাইরে কাজ করা

তিনি বলেন, জলবায়ু বিষয়ে পোশাক শিল্প প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে মূলত দূষণ প্রশমন, কার্বন নির্গমন এবং পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) সম্পর্কে। বন্যা এবং দাবদাহের ক্ষেত্রে ভাবনা খুবই সামান্য অথবা কিছুই নেই।

Advertisement

বর্তমান উষ্ণায়নের বিশ্বে কোম্পানিগুলোর জন্য জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকি বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রক্রিয়াটি এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ব্যবসা এ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ করছে এবং কিছু বিনিয়োগকারী তার যথাযথ মূল্যায়ন করছে।

শ্রোডার্সের টেকসই বিনিয়োগ গবেষণার প্রধান অ্যাঙ্গাস বাউয়ার জানান, এ বিষয়ে খুব কমই তথ্য রয়েছে... কিছু [পোশাক] ব্র্যান্ড তাদের সরবরাহকারীদের কারখানার অবস্থানও প্রকাশ করে না।

আরও পড়ুন>> সবচেয়ে বেশি গরমের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুরা: জাতিসংঘ

এই গবেষণায় গবেষকরা অনুমান পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি ‘জলবায়ু অভিযোজিত’ দৃশ্যপট এবং একটি ‘উচ্চ তাপমাত্রা ও বন্যা’ পরিস্থিতির অধীনে কী ঘটবে তা নির্ণয় করেছেন।

তারা বলেছেন, দ্বিতীয়টির (তাপ-বন্যা) অধীনে শ্রমিকরা আরও ‘গরমের চাপ’ অনুভব করবে। এতে কমে যাবে উৎপাদন। এছাড়া, বন্যার কারণে উল্লেখিত চারটি দেশে বন্ধ হয়ে যাবে বহু কারখানা।

বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে এ চারটি দেশের অবদান প্রায় ১৮ শতাংশ। সেখানকার পোশাক ও পাদুকা কারখানাগুলোতে কাজ করছে এক কোটির বেশি শ্রমিক।

আরও পড়ুন>> ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্ম পার করলো বিশ্ব

গবেষণায় দেখা গেছে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে চারটি দেশের সামগ্রিক প্রত্যাশিত আয়ে সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলার ঘাটতি দেখা দেবে। এটি প্রত্যাশিত মোট আয়ের প্রায় ২২ শতাংশের সমতুল্য। এর ফলে অন্তত ৯ লাখ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান কম সৃষ্টি হবে।

আর ২০৫০ সালের মধ্যে হারানো রপ্তানি আয় ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছাবে এবং কর্মসংস্থানের ঘাটতি দাঁড়াবে ৮৬ লাখ ৪০ হাজারে।

কেএএ/