দেশজুড়ে

যাত্রীছাউনিতে ফ্যান নেই, সন্ধ্যা হলেই ভুতুড়ে পরিবেশ

রাজস্ব আদায়ে লালমনিরহাট ডিভিশনের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন। ২০২১ সালে স্টেশনটির আধুনিকায়ন করা হয়। তবে বাড়েনি সেবা। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যাত্রীরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের প্ল্যাটফর্ম উঁচু ও বর্ধিতকরণ, প্রথম, দ্বিতীয় ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য বিশ্রামগার নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হয়। কাজ শেষে ওই বছরের ২২ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী আধুনিক প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করেন। এতে স্টেশনটির শোভাবর্ধন বেড়েছে। তবে যাত্রীসেবার মান বাড়েনি।

নির্মিত বিশ্রামাগারে বিদ্যুৎ সংযোগ ও ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্টেশনটিতে ৫০ ফুট একটি যাত্রী ছাউনি থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় ভিজে যেতে হয় যাত্রীদের।

ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো ভবনেই চলছে স্টেশন মাস্টারের যাবতীয় কার্যক্রম। একটু বৃষ্টিতেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে। সেখান থেকে টিকিটও বিক্রি করা হয়। অনেক যাত্রী উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট কাটতে বা স্টেশন মাস্টারের রুমে যেতে হোঁচট খেয়ে পড়ে আঘাতপ্রাপ্তও হচ্ছেন। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের বরাদ্দ কম থাকায় যাত্রীরা টিকিট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

Advertisement

বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন সূত্র জানায়, রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের সান্তাহার-লালমনিহাট রুটে ১১টি রেলস্টেশন গাইবান্ধার সীমানায় পড়েছে। এরমধ্যে বামনডাঙ্গা স্টেশনটি লালমনিরহাট ডিভিশনে রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস, করতোয়া এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস ও দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। এসব আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতিটি ট্রেনই এ স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। তবে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট বরাদ্দ পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

আরও পড়ুন: এখন আর শুয়ে-বসে টিকিট কাটতে হয় না বামনডাঙ্গা স্টেশনে

স্থানীয় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হবি জাগো নিউজকে বলেন, বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উঁচু ও বর্ধিত করা হলেও বিভিন্ন অংশে বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় সন্ধ্যা হলেই ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে।

পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার বাসিন্দা সবুজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ট্রেনেই ঢাকায় আসা-যাওয়া করি। তবে এ স্টেশনের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় অনেক সময় টিকিট পাই না। তখন অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’

Advertisement

আসাদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মের অনেক উন্নয়ন হলেও ভালো টিকিট কাউন্টার নেই। কয়েকদিন আগেও এখানে শুয়ে- বসে টিকিট কিনতে হতো।’

গাইবান্ধা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাড়ির কাছে স্টেশন হওয়ায় ট্রেনেই কলেজে যাতায়াত করি। তবে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে ভালো মানের কোনো শৌচাগার নেই। এ কারণে যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়।

যাত্রী জয়ন্ত সাহা যতন বলেন, এ রুটের প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন দীর্ঘদিন ধরে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে যাত্রা বিরতি করে। এ স্টেশন থেকেই পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও সাদুল্লাপুর উপজেলার অনেক যাত্রী বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। কিন্তু এ স্টেশনের জন্য আসন বরাদ্দ অনেক কম। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে স্টেশনে আসন সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।

এ বিষয়ে কথা হলে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের মাস্টার মো. হাইউল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, যাত্রীছাউনি ও প্ল্যাটফর্ম উঁচু করায় অফিস রুমটি নিচু হয়েছে। এজন্য পুরোনো ভবনেই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের অনুপযোগী শেডটি (যাত্রীছাউনি) পরিবর্তনসহ শেডের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে নতুনভাবে নির্মাণসহ স্টেশনের বিভিন্ন সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, সমন্বিত একটি বড় স্টেশন হিসেবে এখানে আরও কাজ করা প্রয়োজন। সামগ্রিক সেবার মান বাড়াতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসআর/জিকেএস