ফিচার

পৃথিবীর ভয়ংকর ৩ মাংসখেকো উদ্ভিদ

অনেকেই হয়তো নরখাদক গাছের গল্প শুনেছেন বা সিনেমায় দেখেছেন। যা কি না আফ্রিকার গভীর অরণ্যে দেখা মেলে। বিশালদেহী সেই গাছগুলো তাদের ডাল-পালা, কাণ্ডের সাহায্যে মানুষকে পেঁচিয়ে তাদের খাবারে পরিণত করে। তবে আসলেই কি এমন গাছ আফ্রিকায় আছে?

Advertisement

মানুষখেকো এই গাছের দেখা এখনো মেলেনি। তবে মাংস খায় এমন গাছ কিন্তু আসলেই রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জঙ্গল ঘেঁটে এমন প্রায় ৪৫০ প্রজাতির গাছের সন্ধান মিলেছে, যারা সালোকসংশ্লেষণের পাশাপাশি নানা ফাঁদের সাহায্যে মাংস ভক্ষণ করে।

মূলত বেঁচে থাকার তাগিদে উদ্ভিদগুলো মাংসাশী উদ্ভিদে পরিণত হয়। গাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সূর্যের আলো, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পানি। এছাড়া নাইট্রোজেনও ভীষণভাবে দরকার। যেসব গাছ মাটি থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে না, তারা এ ধরনের প্রাণী থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। কারণ এ ধরনের গাছ সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে ভূমিতে জন্মায়। স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম থাকে।

আসুন জেনে নিই পৃথিবীর ভয়ংকর ৩ মাংসখেকো উদ্ভিদ সম্পর্কে-

Advertisement

পিচার প্লান্টতার মধ্যে অন্যতম কলসির মতো দেখতে গাছটি। এরা বিশেষ অঙ্গের সাহায্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রাণীকে আকৃষ্ট করে। তারপর প্রাণীগুলো মুখের ভেতরে পড়তেই ঢাকনা বন্ধ করে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে শিকারের প্রাণনাশ করে। এই শিকারি মাংসাশী গাছের নাম ‘পিচার প্লান্ট’।

আরও পড়ুন: বিশ্বের যে স্থানের মানুষ এখনো পোশাক পরেন না

পিচার অর্থ ‘কলসি’। কলসির ন্যায় দেখতে বিশেষ পাতার মতো অঙ্গ আছে বলেই এমন নামকরণ। এর বৈজ্ঞানিক নাম নেপেন্থেস অ্যাটেনবারোওঘি। এর ভেতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি প্রায়ই বানররা খেতে আসে বলে এদের এর আরেক নাম হচ্ছে মাংকি কাপ। এরা মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহণের পাশাপাশি পোকামাকড় পেলে তাদেরও খায়।

পিচার প্লান্ট প্রথমে শিকারদের আকৃষ্ট করে নিজেদের দিকে নিয়ে আসে। পিচারের ঢাকনা থেকে হালকা সুবাস নির্গত হয়; যা মাছি, পিঁপড়া, গুবরে পোকা, প্রজাপতির ন্যায় পতঙ্গদের আকৃষ্ট করতে পারদর্শী। অনেক সময়ে পিচারের উজ্জ্বল রং দেখেও পোকামাকড় আকৃষ্ট হয়। এছাড়া এদের ছোট ছোট পাখি ও ইঁদুরদের ভোজ হিসেবে গ্রহণ করতে দেখা যায়।

Advertisement

পতঙ্গরা যখন পিচারের ওপর গিয়ে বসে, তখন এরা পিছলে পিচারের ভেতরে আঠার ফাঁদে আটকে যায়। বেশ পিচ্ছিল থাকায় পতঙ্গগুলো শত চেষ্টা করেও বের হতে পারে না। ধীরে ধীরে পিচারের ঢাকনা বন্ধ হয়ে পাচক রস নির্গত হতে থাকে। এছাড়াও অ্যাসিড ক্ষরণ হয়। পাচক রস এবং অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় প্রাণীটি খাদ্যে পরিণত হয়।

পিচার প্লান্টের ঢাকনার একাধিক সুবিধাও আছে। বৃষ্টির পানি যেন কলসির ভেতরের রাসায়নিক পদার্থ নষ্ট না করতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখে ঢাকনা। এই গাছগুলো উচ্চতায় ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা ও উচ্চতা ১৫ সেন্টিমিটারের মতো হয়ে থাকে। পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়া, মাদাগাস্কার, সিসিলিস, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জঙ্গলে এই গাছের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: নিজের সন্তান হত্যা করে খেয়ে ফেলে যেসব প্রাণী

ইউট্রিকুলারিয়াছোট্ট হলুদ ফুল দেখে যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে। তবে দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন এটি কিন্তু খুবই ভয়ংকর। এরা ব্ল্যাডারওয়ার্ট নামে বেশি পরিচিত। বিভিন্ন মহাদেশে এই ইউট্রিকুলারিয়াগণের অধীনে প্রায় ২০০ প্রজাতি রয়েছে। মাংসাশী উদ্ভিদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতি ইউট্রিকুলারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। জলে ও স্থলে এরা জন্মায়।

এই উদ্ভিদের দেহে ব্ল্যাডার বা থলির মতো গঠনবিশিষ্ট ফাঁদ থাকে। এই ফাঁদের মুখে গ্রন্থি ও সংবেদী লোমসমেত প্যাঁচানো অ্যান্টেনার মতো গঠন থাকে। এই অ্যান্টেনা শিকারকে ফাঁদের দরজায় নিয়ে আসতে সাহায্য করে। এরপর সংবেদী লোমে টান পড়া মাত্র ঘটনা ঘটে যায়। বাইরের তুলনায় থলির ভেতরে চাপ কম থাকে বিধায় টান পড়া মাত্র থলি নিজ দায়িত্বে শিকারকে ভেতরে টেনে নেয়। প্রোটোজোয়া, মশার লার্ভা ও ছোট ছোট মাছ এভাবে ইউট্রিকুলারিয়ার শিকারে পরিণত হয়। পুরো ব্যাপারটা খুবই কম সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়।

ড্রসেরাড্রসেরের প্রায় ২০০টি প্রজাতি রয়েছে। এদের নিঃসন্দেহে মাংসাশী উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের রত্ন বলা যায়। সবচেয়ে সুন্দর আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফাঁদ ব্যবস্থার অধিকারী ড্রসেরা উদ্ভিদগুলোকে ‘সানডিউ’ বলেও ডাকা হয়। কারণ এদের পাতায় সরু কাঠির ন্যায় উপাঙ্গের মাথায় এক ধরনের আঠালো, হজম সহায়ক এনজাইম জমে থাকে। দেখে মনে হয় বিন্দু বিন্দু শিশির জমে আছে। রোদে ঝকমক করা এমন শিশিরভেজা উদ্ভিদ দেখে কারও মনেই কোনো খারাপ চিন্তা আসে না। বিশেষ করে পোকামাকড়দের কোনো বিপদের কথা মনেও আসে না। তাই তারা এগিয়ে আসে, আর আটকা পড়ে যায়। পাতার পৃষ্ঠে আঠালো গ্রন্থি থাকে যা পোকামাকড়দের আটকে ফেলে আর শিশির বিন্দুর ন্যায় এনজাইমগুলো পোকার দেহ হজম করে ফেলে। ড্রসেরা স্ব-পরাগায়ণ ও স্ব-নিষেক করতে সক্ষম।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম

কেএসকে/জেআইএম