দেশজুড়ে

মাথায় ছাদ ভেঙে পড়ার আতঙ্ক, বৃষ্টি হলে চুয়ে পড়ে পানি

বাগেরহাটের ৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২৭টির কার্যক্রম চলছে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ভবনে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে এসব পরিত্যক্ত ভবনেই সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের। এতে করে সব সময়ই নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে সেবা প্রত্যাশীদের। আর তাই সবার দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করার।

Advertisement

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ভবনে চলছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। সব সময় ছাঁদ ভেঙ্গে মাথায় পড়ার আতঙ্কে থাকে সবাই। পরিষদের পুরো ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা।

এদিকে কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা প্রত্যাশীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। কেউ আসছেন বয়স্ক-বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে কেউ আবার টিসিবির পণ্যর জন্য অপেক্ষা করছে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: ৪ গ্রামের দুঃখ একটি কাঠের সাঁকো

Advertisement

শুধু তেলিগাতী ও বাধাল ইউনিয়ন পরিষদই নয় রায়েন্দা, ষাটগম্বুজ, কড়াপড়া, বলইবুনিয়া, গাংনী, কলাতলা, রামচন্দ্রপুর, বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি পরিষদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে অন্তত ৯টি পরিষদ।

তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদে বয়স্কভাতা নিতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে মানুষের প্রচুর ভিড়। পরিষদের ভবন ভালো না থাকায় ভেতরে বসার ব্যবস্থা নেই। তাই গাছের নিচে বসে আছি।

বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিতে আসা নাজনীন বলেন, টিসিবির কার্ড নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। পরিষদের পুরাতন ভবন ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে। আমরা কয়েকবার এখানে এসে নানা সমস্যায় পড়ছি।

পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে তেলিগাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদা আকতার বলেন, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অনেক কষ্ট করে নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায় সেই আতঙ্কে থাকতে হয়।

Advertisement

অন্যদিকে বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল অহিদ বলেন, কেউ আসছেন বয়স্ক-বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে কেউ আবার টিসিবির পণ্য নিতে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে কার্যক্রম চালাতে হয়। আশেপাশে কোন ভবন নেই, যে ভাড়া নিব। আমরা দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাই।

আরও পড়ুন: দিনে ৪০ হাজার টাকার আচার বিক্রি করেন হাবিব

বাগেরহাট এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, জেলায় ৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ। এরমধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ও গাংনী পরিষদের নিজস্ব জায়গা নেই। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধারা ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে তৃতীয় পর্যায়ে নতুন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা হবে।

সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তিদের কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, নতুন ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ভবনগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জেএস/জিকেএস