এক সময় বন্যপ্রাণী দেখলেই আটক কিংবা মেরে ফেলাটাই যেন স্বাভাবিক ছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে। তবে এখন যেকোনো বন্যপ্রাণী কিংবা বিষাক্ত সাপ ধরা পড়লে সবাই খবর দেন রাকায়েতকে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান রাকায়েত। প্রাণীটি অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেন, পথ হারালে পথ খুঁজে দেন আর কেউ শিকার করতে চাইলে তাকে বুঝিয়ে করে তোলেন পশুপ্রেমী।
Advertisement
রাকায়েত আহসান পটুয়াখালীর কলাপাড়া নাচনাপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নাজমুল আহসান হেমায়েতের ছেলে। বর্তমানে তিনি কলাপাড়া এমবি কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০১৮ সাল থেকে সামাজিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে আসছেন তিনি।
যখন থেকে তিনি জানতে পারেন এসব প্রাণীরা মানুষের ক্ষতি করে না কিন্তু মানুষ দীর্ঘদিন থেকে এদের ক্ষতি করে আসছে, তখন থেকেই প্রাণীকূলের ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দেন রাকায়েত। এখন পর্যন্ত শতাধিকের ওপর বিষাক্ত-নির্বিষ সাপ এবং পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী উদ্ধারের পর চিকিৎসা দিয়ে বনে অবমুক্ত করেছেন তিনি।
রাকায়েত আহসান জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার প্রাণীদের প্রতি আলাদা একটি টান ছিল। স্বেচ্ছাসেবী কাজ করতে আমি অ্যানিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালী নামের একটি সংগঠনের সদস্য হই। এই সংগঠনটি মূলত বন্যপ্রাণী, বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়ালের প্রতি সহিংসতা বন্ধ, চিকিৎসা, আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এই এলাকার মানুষ সাপকে বেশি ভয় পায় এবং দেখার সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে। তাই আমি সাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করে মানুষের এই ধারণা বদলাতে চেষ্টা করছি। প্রথম দিকে মানুষ আমাকে পাগল বলে আখ্যা দিত, তবে এখন সাপসহ যেকোনো বন্যপ্রাণী বিপদে পড়লে মানুষ আমাকে খবর দেয়।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, বৃহত্তর বরিশালের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত কোনো স্নেক রেস্কিউয়ার নেই। যার ফলে আমরা দেখেছি অনেক মানুষ সাপে কামড়ানো রোগী নিয়ে ওঝার শরণাপন্ন হন এবং ওই রোগী মারা যান। পরে আমি স্নেক রেস্কিউ টিম বাংলাদেশ থেকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে আসছি। এই সকল কাজের খরচ আমি নিজে বহন করি এবং সংগঠনও সহযোগিতা করে। আমার লক্ষ্য অত্র এলাকার প্রত্যেকটা মানুষ নিজের পোষা প্রাণীর মতো বন্যপ্রাণীকেও ভালেবাসুক।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সমাজসেবক নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, রাকায়েতের এই কাজটাকে প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ মূল্য না দিতে পারলেও এখন আমরা উপলদ্ধি করছি যে সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনি স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যেকোনো প্রাণীর বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে তিনি বলতে পারেন ওই প্রাণীটা কী চাচ্ছে।
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাকায়েত একজন খুব ভালো স্নেক রেস্কিউয়ার। আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে সার্বক্ষণিক কাজে সহযোগিতা করি। তার এই স্বেচ্ছাসেবী কাজ সমাজ ও বন্যপ্রাণীর জন্য একটি আশীর্বাদ এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিদর্শন।
এফএ/এমএস
Advertisement