দেশজুড়ে

নিরাপত্তার অভাবে আশ্রয়ণের ঘর ছেড়েছে ১৪ পরিবার

পানির সংকট ও মাদকসেবীদের আড্ডায় নিরাপত্তার অভাবে কক্সবাজারের টেকনাফে মুজিববর্ষে উপহারের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন ১৪টি পরিবার। গত মাস তিনেক সময়ের ভেতর উপহারের ঘরগুলো ছেড়ে তারা স্বজনদের ঘর ও ভাড়া বাসায় উঠেছেন বলে জানা গেছে।

Advertisement

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আমতলি চাকমাপাড়া গ্রামের পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় তৈরি মুজিববর্ষের উপহারের ১৪টি ঘর। উক্ত আশ্রয়ণে গিয়ে কোনো পরিবারের দেখা মেলেনি। কয়েকটি ঘরের দরজা খোলা ছিল, বাকি ঘরগুলো তালাবদ্ধ। বিদ্যুতের মিটারগুলো ভাঙা। ঘরের চারপাশে দুটি খাল রয়েছে। ভারি বৃষ্টি হলে পানি ওঠে আশ্রয়ণে। পানি উঠলে সরে যাওয়ার নেই কোনো ব্যবস্থাও। এছাড়া রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট।

স্থানীয় ওয়াকিবহাল মহল জানায়, উপকারভোগীরা ঘর পেয়ে আনন্দে বসবাস শুরু করেন। পরে পানির অভাব ও নিরাপত্তা সংকটের কারণে ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে ভাড়াবাসায় চলে যান। দিন-রাত মাদক কারবারিদের আনাগোনা, ঘরে তালা ভেঙে প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে যাওয়ার কারণে অতিষ্ট হয়ে ওঠেন উপকারভোগীরা। মাদকসেবীরা জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে ইয়াবা সেবন করে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। এসব সম্যসার কারণে ১৪টি পরিবার ঘর ছেড়ে চলে গেছে।

উপহারের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া সখিনা খাতুন (২৮) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার মুজিববর্ষের একটি ঘর পেয়ে মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছিল। স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র মেয়ে নিয়ে আনন্দে এ ঘরে উঠেছিলাম গত বছরের শেষের দিকে। কয়েক মাস থাকার পর দেখি আশপাশে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির সহজ ব্যবস্থা নেই। রয়েছে চোর-ডাকাত ও মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য। তারা জোর করে, ঘরে ঢুকে আড্ডা দেয়। ভারী বৃষ্টি হলে পানি উঠে রুমে পানি ঢোকে।

Advertisement

সখিনা আরও বলেন, আমতলীর আশ্রয়ণে মুজিববর্ষের ১৪টি উপহারের ঘরে এখন কোনো পরিবার নেই। ভয়ে আমিও বর্তমানে ভাড়া বাসায় থাকি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। মেয়েটি লম্বাবিল হাজি মোহাম্মদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ শ্রেণিতে পড়ে।

আরেক ভুক্তভোগী বিধবা সুফিয়া খাতুন (২৯) বলেন, স্বামী নেই, তিন সন্তানসহ মুজিববর্ষের ঘর পাওয়ার পর চিন্তামুক্ত হয়ে আশ্রয়ণে উঠেছিলাম। ঘরে গিয়ে দেখি পানির তীব্র সংকট। সঙ্গে রয়েছে মাদক সেবীদের আড্ডা। দিনের বেলায় কোনোরকম থাকা গেলেও রাতের বেলায় ভয়ে সেখানে থাকা দায়। আমরা অসহায় মানুষ, এসব নিপীড়ন সইতে না পেরে উপহারের ঘর ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হলাম। এখন তিন সন্তানসহ ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকছি। অন্যরাও একে একে চলে গেছেন।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ২ নম্বর ওয়ার্ড আমতলী গ্রামে মুজিববর্ষের উপহারের ঘর পেয়েছিল ১৪ অসহায় পরিবার। পরে উপকারভোগীরা জানায় সেখানে পানি ও নিরাপত্তার সংকটে রয়েছে তারা। এসব বিষয় ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি। সমস্যা দ্রুত সমাধান না হওয়ায় ১৪ পরিবারই আশ্রয়ণ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, হোয়াইক্যংয়ের সেই আশ্রয়ণে পানি সংকট সমাধানে কয়েকবার নলকূপ বসানোর চেষ্টা হয়েছে, তবে সেখানে পানি পাওয়া যায় না। এলাকাটা ডাকাত প্রবণ, ভুক্তভোগী অনেক পরিবার সম্যসাগুলো আমাদের জানিয়েছেন। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। সংকট দূর হলে ১৪ পরিবার পুনরায় আশ্রয়ণে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।

Advertisement

তিনি বলেন, আমার আগে যারা ছিলেন তারা এমন রিমোট এলাকায় কেন মুজিববর্ষের ঘর তৈরি করেছেন সেটা সঠিক বুঝে আসছে না।

এফএ/জেআইএম