স্বাস্থ্য

রাতেও হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর ভিড়

চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু ও আক্রান্ত দেশের ইতিহাসের সব রেকর্ড ভঙ্গ। এখনো কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভিড় করছেন ডেঙ্গুরোগী। এমনকি রাতেও হাসপাতলগুলোতে রোগীর ভিড় দেখা যায়।

Advertisement

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির নিচতলায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গুরোগীদের ভিড়। পুরো নিচতলাজুড়ে ডেঙ্গুরোগী। সেখানে ১০৭ নম্বর কক্ষে দুজন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। বাইরে করিডরে অপেক্ষা করছেন শতাধিক রোগী। যাদের মধ্যে মধ্যবয়সীর সংখ্যাই বেশি।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বহির্বিভাগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য দুপুর থেকে অপেক্ষা করছিলেন মধ্যবাড্ডার রোহান মাহমুদ। ডেঙ্গু পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে ব্যবস্থাপত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। চারদিন ধরে তার জ্বর। শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব ও দুর্বলতা আছে। শনিবার ৪-৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করে এই হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করিয়েছেন। টেস্ট করাতে আবার ৪-৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুতে ১৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৯৯৩ রোগী

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘টেস্ট আর সিরিয়াল নিতে গিয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দুপুর আড়াইটায় এসেছি, জানি না কখন চিকিৎসকের দেখা পাবো।’

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ১০৭ নম্বর কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড়। একই রকম ভিড় টেস্টের টাকা জমা দেওয়ার টিকিট কাউন্টারে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বেশিরভাগ রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে অবস্থা গুরুতর হলে ভর্তির কথা বলছেন চিকিৎসকরা। এরপরও ডাক্তার ও টেস্টের সিরিয়ালের জন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

একই দশা খিলক্ষেত থেকে আসা সুবর্ণার। ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রী জানায়, ৮-৯ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। এর মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ডাক্তার দেখাতে তিন বার হাসপাতালে আসতে হয়েছে। প্রতিবারই ডাক্তার দেখানো ও টেস্ট করাতে দিনের পুরো সময়টাই চলে যায়।

Advertisement

সুবর্ণার মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে জায়গা নেই, ভর্তি নিচ্ছে না। ডিএস স্যালাইন আর বমির ওষুধ দিচ্ছে। জ্বর না কমায় আজকে আবার এসেছি। ৪-৫ ঘণ্টার আগে ডাক্তার দেখাতে পারছি না।’

আরও পড়ুন>> মশা না গেলে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩০ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৯৯৩ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৪৮ হাজার ৩২৮ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭ হাজার ৫৯ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৮১ হাজার ২৬৯ জন ভর্তি হয়েছেন।

গত সপ্তাহে, বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, নয়তো সেপ্টেম্বরেও এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন তারা।

এসএম/ইএ/জিকেএস