ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে আবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে এই সরকার ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ হয়েছে। অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চরম ব্যর্থ সরকার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বিকার।
Advertisement
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এবছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু সংবাদই হচ্ছে এখন প্রধান শিরোনাম। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২০ জন করে লোক মারা যাচ্ছে। শুধু সরকারি হিসেবেই গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৭৪৮ জন। এবছর মোট মৃত্যু ৭১৬ জন, যার মধ্যে ৫১৩ জন ঢাকাতে এবং ২০৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫ জন, যার মধ্যে ৬৬ হাজার ৬৫ জন ঢাকার এবং ৭৯ হাজার ২৭০ জন ঢাকার বাইরের।
আরও পড়ুন>> বাইডেনের সঙ্গে সেলফি গলায় ঝুলিয়ে রাখার পরামর্শ ফখরুলের)
Advertisement
মির্জা ফখরুল বলেন, নিম্নমানের কিট ও সরকারের উদাসীনতার জন্য আমরা জানি না কী পরিমাণ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, আসল রোগীর সংখ্যা কত তা সহজেই অনুমেয় যে, কয়েকগুন বেশি হবে। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুকে আমরা চিনছি, জানছি। ২০১৮ সালে এসে তা বিভীষিকাময় রূপ দেখায়। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে সাত জন। ২০২০ সালে করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছিল তার হিসাব রাখাই ছিল দায়। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন আর ২০২৩ এখন পর্যন্ত ৭১৬, আর কত?
তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না, আবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে মানুষ। লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিশুরা মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে, মৃতের একটা বড় অংশ শিশু। সম্প্রতি সাতদিনের ব্যবধানে দুই সন্তান হারিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবর কি ব্যর্থ এই সরকারের বিবেককে নাড়া দেয় না? তাদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, জবাবদিহি নেই। শুধু সরকারের দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে এই রোগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি যেমন- মশা মারার ওষুধ, স্প্রে, স্যালাইন; রোগ নির্ণয়ের কিটের অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের জন্য ডেঙ্গু রোগ প্রকট রূপ নিয়েছে। ঢাকার বাইরে রোগ নির্ণয়ের কিট পাওয়া যাচ্ছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হাজারো কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। ২০১৯ সালেই টিআইবি ডেঙ্গু নিয়ে দুর্নীতির কথা বলেছিল। তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৫টি সুপারিশ করেছিল, কিন্তু সম্প্রতি টিআইবি জানাচ্ছে তাদের সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা।
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকার এড়াতে পারে না
মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু ঢাকা সিটিতেই মশা নিধনে বাৎসরিক বাজেট প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা, যা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই আত্মসাৎ করছে। ডেঙ্গু শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র পরিবারের প্রমোদ ভ্রমণেই প্রমাণ হয় এই রোগ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতা। মানবতাহীন অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার বলেই তারা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ভ্রক্ষেপহীন।আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি।
Advertisement
মির্জা ফখরুল দেশের সব দেশপ্রেমিক মানুষ এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মীকে দেশের এই দুর্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আমাদের প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আওয়াল এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাব যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
কেএইচ/ইএ/জিকেএস