ভ্রমণ

থাইল্যান্ডে অপরূপ ‘৯৯৯’ খেজুর বাগানে

এম মাঈন উদ্দিন, থাইল্যান্ড থেকে

Advertisement

ব্যাংকক শহর থেকে ১৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়ার পর মনে হবে আরব দেশের কোন স্থানে আসছি। দুচোখ যতটুকু যাবে শুধু খেজুর গাছ আর খেজুরের সমারোহ। অপরূপ সৌন্দর্যময় বাগান দেখে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। থাইল্যান্ডের পেচাবুরি এলাকায় খেজুর বাগানটির অবস্থান।

ব্যাংকক থেকে ওই বাগানে যাওয়ার পথে ১০০ কিলোমিটার পর ৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু গ্রাম আর গ্রাম। এ যেন সবুজের সমারোহ। এই গ্রামীণ এলাকার মাঝে বয়ে গেছে বড় বড় রাস্তা। বাংলাদেশের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ে বড় এই সড়ক।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের কোরাল দ্বীপ ভ্রমণে কীভাবে যাবেন?

Advertisement

সড়কের দুপাশে কোথাও নারিকেল বাগান, কোথাও হাজার হাজার তাল গাছের বাগান, আবার কোথাও পেঁপেঁ, পেয়ারা সহ নানা সবজি বাগান দেখে খুব ভালো লাগে। প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে শুধু লবণ চাষ চোখে পড়বে।

এই এলাকার সব মানুষই কৃষির সঙ্গে জড়িত। এই পথ মাড়িয়ে যাওয়ার পথে খেজুর বাগানের ১০ কিলোমিটার আগে থেকে পথ নির্দেশনার জন্য খেজুরের ছবি সংবলিত বড় বড় সাইন বোর্ড টাঙানো আছে।

তপ্ত দুপুরে ক্লান্ত শরীরের গাড়ি থেকে নামার পর বিভিন্ন ধরনের তরতাজা খেজুর দেখে মনে হলো মুহুর্তে ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। দেখা গেলো, অনেক কর্মচারী কাজ করছেন। কেউ খেজুর প্যাকেটজাত করছেন, কেউ খেজুর বাছাই করছেন আবার কেউ বাগান থেকে খেজুর সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন।

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আলতাদিঘি

Advertisement

আমি, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শরীফ ও থাইল্যান্ডে বসবাস করা বাংলদেশি নাগরিক হাসান ভাই’সহ এখানে এসেছি। এরপর খেজুর বাগানের মালিক ষাটোর্ধ্ব নারী নোকেন নোনক তার বাংলো থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

এরপর আমরা এই বিশাল খেজুর বাগান ঘুরে ঘুরে দেখলাম। হাসান ভাই থাই ভাষা বলতে পারেন। তার সঙ্গে ওই নারীর বাগান সম্পর্কে বিভিন্ন কথা-বার্তা হলো। বাগান মালিক নোকেন নোনক জানান, ‘প্রায় ২০ বছর আগে ছোট পরিসরে দুবাই থেকে খেঁজুর গাছের চারা এনে বাগান শুরু করেন তিনি।’

ক্রমেই তার বাগানের পরিধি বাড়তে থাকে। এখন ৬০ একর জায়গাজুড়ে তার বাগান। নোনক বলেন, ‘এখন তার বাগানে দুবাই, ইরান ও ইংল্যান্ড তিন দেশের তিন জাতের খেজুর গাছ ও খেজুর আছে। থাইল্যান্ডে চাহিদার প্রায় ৫০ ভাগ খেঁজুর সরবরাহ হয় এই বাগান থেকে।’

আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন শাপলার রাজ্যে

শুধু খেজুর বিক্রি করে থেমে নেন তিনি, বিক্রি করেন খেজুর গাছের চারাও। দেশ-বিদেশের লোকজন এসে খেঁজুরের চারা ক্রয় করে নিয়ে যান। এখানকার এক একটি খেজুর গাছের চারার অনেক দাম।

ইরানের প্রতি পিস চারার মূল্য ১৩০০ বাত (বাংলায় প্রায় ৩৮০০ টাকা), দুবাইয়ের চারা ১৫০০ বাত (বাংলা টাকা ৪৮০০ টাকা), ইংল্যান্ডের চারা প্রতিপিস ১৮০০ বাত (বাংলা টাকা প্রায় ৫৮০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গাছে খেজুর ঝুলছে। খেজুরগুলো গাছের মধ্যে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। কয়েকশ’ শ্রমিক বাগানে কাজ করছে। কেউ গাছ থেকে খেজুর নামাচ্ছেন, কেউ গাছের পরিচর্চা করছে আবার কেউ বা চারার পরিচর্চা করছে।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডে নারীদের ব্যস্ততা, সব বয়সীই কর্মজীবী

বাগানে তখনো বেশ কয়েকজন ক্রেতা দেখা গেলো। কেউ খেজুর ক্রয় করছে, কেউ চারা ক্রয় করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘৯৯৯’ এই খেজুর বাগান থেকে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি মূল্যে খেঁজুর কেনেন।

২০০-১০০০ বাত পর্যন্ত প্রতি কেজি খেজুরের দাম রাখা হয়। আবার অনেক খেজুর থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় পাইকারি ফল বাজার তালাক্ষায় আড়তে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোহরা এগ্রো ফামর্স এন্ড নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. ওমর শরীফ বলেন, ‘অনলাইনে দেখে ও বাগান মালিকের সাথে কথা বলে এখানে এসেছি।’

‘তবে আমি চিন্তা করতে পারিনি, আরব দেশ ছাড়া থাইল্যান্ডে এতো বড় খেজুর বাগান আছে। আমি দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। খেজুরগুলো খুব সুস্বাদু। তবে গাছের চারার দাম অনেক বেশি। তারপরও আমি ৫০০ চারার অর্ডার করেছি।’

জেএমএস/এমএস