পাহাড়, ঝরনা-ঝিরি, ঘন সবুজ বনে ঘেরা পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি। এক সময়ের কৃষি ও প্রকৃতি নির্ভর পহাড়ি এই জেলায় সম্প্রতি পর্যটন শিল্পের বিকাশ অনেকটা দৃশ্যমান।
Advertisement
অন্তত গত এক দশকে পাহাড়ি এ জেলায় পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। বিশেষত, সাজেক পর্যটন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের সমাগম ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা তাদের ভ্রমণ তালিকায় খাগড়াছড়িকেও যুক্ত করেছে।
আরও পড়ুন: ৬ বছরেই দেশের ৬৪ জেলা ঘুরেছেন সাফাত-শিখা দম্পতি
পাহাড়িকন্যা খ্যাত খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের সমাগম বাড়াতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেই খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র নতুন করে প্রাণ পেয়েছে।
Advertisement
আলুটিলায় ঝুলন্ত ব্রিজ, নন্দন কানন, অ্যাম্পিথিয়েটার ও দুই পাহাড়কে সংযোগকারী ‘লাভ ব্রিজ’ পর্যটকদের মধ্যে দারুণভাবে সাড়া ফেলেছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক সমাগম বাড়ায় বেড়েছে রাজস্ব আদায়ও।
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝরনা ও র্পাবত্য জেলা পরিষদ পার্কের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও পর্যটন শিল্প বিকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ির প্রবেশদ্বার মানিকছড়ি উপজেলায় ‘ডিসিপার্ক’কে ঘিরে প্রকৃতি বান্ধব পযটনের সূচনা করেছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আলতাদিঘি
প্রায় ১৬০ একর এলাকা বেদখলমুক্ত করে পার্কটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রকৃতিকে গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। পার্কে ২২টি টিলা ও ৩টি লেক পর্যটকদের মনের তৃষ্ণা মেটাবে। পার্কের ভেতরে তাবুবাসের সুযোগও আছে।
Advertisement
নিসর্গপ্রেমীরা এখানে রাতও কাটানোরও সুযোগ পাবেন। তাবুবাসের পাশাপাশি অরণ্য কুটির রিসোর্টেও রাত কাটাতে পারবে ডিসি পার্কের গোধূলি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্যপট দেখে মুগ্ধ হবে ডিসি পার্ক ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
এরই মধ্যে ডিসি পার্কের ২০ একর জায়গাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পাখিবান্ধব গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। পার্কের ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বন্যপ্রাণী ও পাখিদের নিরাপত্তা দিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটিই জেলার প্রথম পাখির অভয়ারণ্য।
আরও পড়ুন: কম খরচে কীভাবে ঘুরবেন পান্থুমাই জলপ্রপাতে?
অরণ্যে ঘেরা টিলা ও লেকবেষ্টিত তাই এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী বলেন, ‘এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি রিসোর্টও নির্মাণ করা হবে।’
পার্কে যাতায়াত সহজ করার জন্য সড়কটি সংস্কার করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। ইউএনও আরো বলেন, ‘মানিকছড়ি ডিসি পার্ক এক অনন্য প্রাকৃতিক নিসর্গের স্থান। জনবসতি না থাকায় প্রজাতি পাখির নিরাপদ আশ্রয় হবে পার্কটি। পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলা ডিসি পার্কের ২০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য।’
এই উদ্দেশ্যে ডিসি পার্কের বিভিন্ন গাছে সুবিধাজনক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে ১০০ মাটির হাড়ি পাখির বাসা। এই বাসাগুলো পাখিদের আকৃষ্ট করবে ও নিরাপদ বোধ করলে অন্যান্য পাখিও এখানে থাকবে।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডবাসীরা ভাতের চেয়ে ফল খায় বেশি
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম বলেন এখানে ক্যাম্পিংকে আমরা গুরুত্ব দেব। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে এখানে ইকো রির্সোট গড়ে তুলবো।
প্রাথমিকভাবে আমরা অবকাঠামো নির্মাণ করছি। ভবিষ্যতে কীভাবে এটিকে আরো পর্যটন বান্ধব পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ডিসি পার্ককে ঘিরে আশার কথা শোনালেন।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের কোরাল দ্বীপ ভ্রমণে কীভাবে যাবেন?
তিনি বলেন, ‘পুরো জেলায় পর্যটনকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে মানিকছড়িতে প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন গড়ে তেলা হচ্ছে। পার্কে জিপলাইন, জায়ান্টসুইং, আর্চারি পয়েন্টসহ বিভিন্ন এডভেঞ্চার একটিভিটি চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ড্র-ব্রিজের মাধ্যমে লেকগুলোকে যুক্ত করে যোগ করা হবে লেকে কায়াকিংয়ের সুবিধা।
ভবিষ্যত পর্যটনের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে ক্যাম্পিংসহ আবাসন সুবিধা আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে। এতে স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানও বাড়বে বহুগুণ। যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করা পাশাপাশি দেশের পর্যটন অর্থনীতিকেও বেগবান করবে।
জেএমএস/এএসএম