জাতীয়

আইন প্রয়োগে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে: টিআইবি

খসড়া সাইবার নিরাপত্তা বিল- ২০২৩ পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সাইবার নিরাপত্তা আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও চর্চার আলোকে এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি এই বিলে দক্ষতা ও সক্ষমতা বিবেচনা না করে এবং বিচারিক নজরদারি ছাড়াই অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে টিআইবি।

Advertisement

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়, বিলটি যাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই মত, চিন্তা, বিবেক, বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যদের জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ই-মেইল পাঠানো হয়েছে। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮ থেকে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩: তুলনামূলক পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক টিআইবির কার্যপত্র সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা বিলের কয়েক ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্ত

ওই কার্যপত্রে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি ও সব সংসদ সদস্যকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) রহিত করে এর স্থলে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) ২০২৩ প্রণয়ন করার সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে যে, ডিএসএর ব্যবহার ও অপব্যবহারের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো বিভিন্ন মৌলিক মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন হয়েছে। এর ফলে জনমনে যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি হয়েছে, সরকার তা অবসানের বাধ্যবাধকতার যথার্থতা উপলব্ধি করেছে।’

Advertisement

কার্যপত্রে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে যৌক্তিকভাবে মানুষের মধ্যে এ প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে যে, যেসব কারণে ডিএসএ রহিত করা হচ্ছে, সিএসএতে সেসব উপাদান থাকবে না। পাশাপাশি এর পরিধি ও উদ্দেশ্য হবে সুনির্দিষ্টভাবে সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের নিরাপত্তা এবং এসবের অবাধ ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত আইনিকাঠামো তৈরি করা।’

এ পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক কার্যপত্রে উপস্থাপিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে খসড়া সিএসএ বিল ২০২৩ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কপি পেস্ট

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, ‘খসড়া সিএসএ বিল-২০২৩ এ ডেটা ও তথ্য অপসারণে বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবারিত ক্ষমতা এবং অনেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এর পরিবর্তে ডিএসএ ২০১৮- এর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধারণার ওপর ভরসা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিধান রাখা হয়েছে। ডিএসএর সব নিবর্তনমূলক উপাদানসহ এর সিংহভাগ ধারাই সিএসএতে হুবহু প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ক্ষতিকর কন্টেন্ট অপসারণ করার প্রয়োজন আছে, তবে তা সীমিত পরিধির মধ্যে থাকতে হবে। এটা বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’

Advertisement

এতে আরও বলা হয়, ‘প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে মত প্রকাশ, ভিন্নমত, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা চর্চা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। এই বিলে দক্ষতা ও সক্ষমতাকে বিবেচনা না করে এবং বিচারিক নজরদারি ছাড়াই অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রযোজ্যক্ষেত্রে বিচারিক নজরদারির যে সক্ষমতা দরকার, তা আছে কি না, তা বিবেচনা করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে কারাদণ্ড বাদ দিয়ে অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ফলে বাস্তবে যে কৌশলে সাংবিধানিক অধিকারকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করা, তা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।’

টিআইবি উল্লেখ করে, ‘মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চার কারণে মানহানির মতো অভিযোগের প্রচলিত আইনে বিচার করা সম্ভব, এমন অনেক বিষয় অযৌক্তিকভাবে এই বিলের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা আইনের জন্য অপরিহার্য অনেক উপাদান এই খসড়ায় নেই।’ এমন বেশকিছু বিষয় সংশোধিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে সুপারিশ করছে টিআইবি।

আরও পড়ুন: সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪টি ধারা অজামিনযোগ্যই থাকছে

বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ‘টিআইবি সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে খসড়া সিএসএ বিল-২০২৩ ঢেলে সাজাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।’

একই সঙ্গে উল্লিখিত কার্যপত্রে উপস্থাপিত বিশ্লেষণ ও সুপারিশের ব্যাপারে কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উভয়পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে সাক্ষাতে আলোচনা করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এসএম/কেএসআর/এএসএম