দেশজুড়ে

‘স্বামীর কবরটাও রক্ষা করতে পারলাম না’

‘বিকালে নদী ভাইঙ্গা ভিটামাটি নিয়া গেছে। কোনোমতো ঘরটা সরাইয়া আরেকজনের জমিতে রাইখা দিছি। নিজের ভিটায় স্বামীর কবরটাও শেষ রক্ষা করতে পারলাম না।’

Advertisement

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম। নিজের ঘর ও ভিটার সঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে স্বামীর কবর। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে তার ভিটামাটি মুহূর্তেই বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তাই স্বামীর কবরের দিকে অপলক তাকিয়ে স্মৃতি হারানোর ভয়ে আঁতকে উঠছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ভাঙন আতঙ্কে মেঘনা তীরের লাখো মানুষ

শুধু মনোয়ারা বেগম না, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে এক দশকে এ গ্রামে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় হাজার পরিবার। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বেহাল দশা নারায়ণখোলা এলাকার নদী তীরবর্তী মানুষের। একের পর এক বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, মসজিদ, কবরস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

Advertisement

সম্প্রতি টানা বর্ষণে পানি বাড়ায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। পানির তোড়ে ধসে যাচ্ছে আবাদি জমি, রাস্তা আর স্থানীয় কবরস্থান। গত একবছরে বিলীন হয়েছে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবন, মসজিদ আর রাস্তাঘাট। গতবছরের ভাঙনের সময় মাত্র ১০০ মিটার তীরবর্তী পাড়ে জিওব্যাগ দিয়ে জরুরি সংস্কার করলেও এবার ভাঙছে নতুন স্থানে। স্থানীয়রা বলছেন, পানির তোড় কম থাকলেও এবার ভাঙনের প্রবণতা বেশি। নতুন করে কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে।

আরও পড়ুন: বগুড়ায় বাড়ছে পানি, ভাঙছে নদী

নারায়ণখোলা গ্রামের তোতা মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছরই নদীভাঙনে আমাদের গ্রামের কৃষিজমি, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়। আমরা এর একটি স্থায়ী সমাধান চাই।’

আলী আকবর নামের আরেকজন বলেন, এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে কারোরই কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। আমরা চরম হতাশার মধ্যে আছি।

Advertisement

নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী জহুরুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজেদের বাড়িতেই বাবার কবর দিয়েছিলাম। সেই কবরের একপাশ এখন নদীর পেটে। যেকোনো মুহূর্তে বাবার কবরটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা সন্তান হিসেবে বাবার কবরটাও রক্ষা করতে পারছি না।’

আরও পড়ুন: ‘ভাঙনের চিন্তায় ঘুমাইতেও ভয় করে’

আঙুল দিয়ে দেখিয়ে স্থানীয় সেকান্দার আলী বলেন, ‘এখানে একটি মসজিদ ছিল। গতবছর ভাঙনে মসজিদটা নদীর পেটে চলে গেছে। পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটাও ভাইঙ্গা গেছে। এগুলো নিয়ে কারও কোনো পদক্ষেপ দেখি না। আমরা নদীভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে চাই।’

এদিকে নদীভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ২০০ মিটার তীরে জিওব্যাগ ফেলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ বিষয়ে শেরপুর পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, আমরা নারায়ণখোলা এলাকার দুটি জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত কাজ শেষ হলে কিছুটা ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।

এসআর/এএসএম