অর্থনীতি

ডেঙ্গুর প্রকোপ: চাহিদা বাড়ায় বাজারে স্যুপের সংকট

* বিক্রি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ* চাহিদার থেকে বাজারে সরবরাহ কম

Advertisement

স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে পরিচিত স্যুপ। এ কারণে সুস্থ মানুষের পাশাপাশি রোগীরাও এখন স্যুপ খেয়ে থাকেন। দেশে গত কয়েক বছরে যেসব রোগের প্রকোপ চলছে, তাতে পথ্য হিসেবে প্রয়োজন হচ্ছে তরল খাবারের। এ কারণে স্যুপে আগ্রহ বাড়ছে ভোক্তাদের। ফলে দিন দিন বাড়ছে স্যুপের বাজার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার সময় থেকে শুরু করে চলতি বছরের ডেঙ্গুর প্রকোপ পর্যন্ত গত প্রায় চার বছরে এ বাজার বাড়ছে ২৫ শতাংশ হারে। বাজার বড় হতে থাকায় বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি নাম লেখিয়েছে দেশের বড় একটি শিল্পগ্রুপ। এতে বাড়ছে স্যুপের উৎপাদনও। এরপরও চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকছে।

তবে হঠাৎ করে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় স্যুপের চাহিদা বেড়েছে। এতে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে স্যুপে সরবরাহে। কোম্পানিগুলো বলছে, উৎপাদন সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করেও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।

Advertisement

দেশে স্যুপ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের পর থেকে পণ্যটির চাহিদা বছরে ২০-২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে সময়ের আগে বাজারে খুব একটা প্রবৃদ্ধি ছিল না। মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসছে। পাশাপাশি বিগত সময়ে করোনা এবং বর্তমানে ডেঙ্গুর কারণে বেড়েছে স্যুপের চাহিদা।

আরও পড়ুন: যে কারণে রোগীকে চিকেন স্যুপ খেতে বলা হয়

কোম্পানিগুলো বলছে, দেশে বছরে এখন স্যুপের চাহিদা ৬০০ টন। ২০২০ সালের আগে যা অর্ধেক ছিল। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে স্যুপের বাজার বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি।

বাংলাদেশে স্যুপের শুরুটা হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানি নেসলের হাত ধরে। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে সামান্য কিছু স্যুপ আমদানি হতো। তবে বিক্রি হতো সীমিত। ১৯৯৭ সালে বাজারজাত শুরুর পর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত স্যুপের ৭০-৮০ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে নেসলের ব্র্যান্ড ‘ম্যাগি’। বর্তমানে বাংলাদেশের বড় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল বাজারজাত করছে ‘ক্যান্টন’ ব্র্যান্ডের স্যুপ। এছাড়া আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার ‘নর’ ব্র্যান্ডের স্যুপ এনেছে বাজারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্যুপ খেয়েই যেভাবে কমাবেন ওজন

স্যুপের বাজার নিয়ে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ও কোম্পানি সচিব দেবব্রত রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির পর থেকে স্যুপের বাজার বড় হচ্ছে। এরমধ্যে আবার এখন ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বেড়েছে। মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে স্যুপকে গ্রহণ করেছে। আবার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে খাদ্যাভ্যাসেও আসছে পরিবর্তন, যা স্যুপের চাহিদাকে ধারাবাহিকভাবে বাড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একটি দেশের সার্বিক চাহিদা বিবেচনায় নিলে এখনো স্যুপের বাজার ছোট। এ ব্যবসা শুরুর পরও খুব একটা বড় হয়নি বাজার, যা এখন হচ্ছে।

চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম

গত কয়েকদিন ঢাকার রামপুরা, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেসব এলাকার অধিকাংশ দোকানে স্যুপের সরবরাহ কম। বিক্রেতারা বলছেন, অর্ডার দিয়েও স্যুপ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ক্রেতাদের অনেকে স্যুপ না পেয়ে ফিরেও যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ঘরেই তৈরি করুন মজাদার থাই স্যুপ

সরেজমিনেও ওই এলাকায় প্রায় ১০টি মুদি দোকানের মধ্যে স্যুপ পাওয়া গেছে ছয়টিতে। আবার কোথাও মিললেও চাহিদামতো ফ্লেভার বা পরিমাণ মিলছে না।

রামপুরায় ‘ভাই ভাই স্টোর’-এর মালিক এনামুল হক বলেন, গত একমাসে কয়েক দফা অর্ডার নিয়েছে স্যুপ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। কিন্তু পণ্য দেয়নি। গত তিনদিন আগে মাত্র দুই বক্স স্যুপ দিয়েছে। যা এক-দুই দিন বিক্রি করা যাবে।

তিনি বলেন, আগে এতো স্যুপের চাহিদা ছিল না। ডেঙ্গু চাহিদা বাড়িয়েছে।

তবে সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আগোরা সুপারশপের অপারেশন অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, প্রচুর স্যুপ বিক্রি হচ্ছে এখন। ওয়্যারহাউজ থেকে চাহিদা দিয়ে আমরা এখনো স্যুপ পাচ্ছি, সে কারণে সরবরাহ সংকট নেই।

আরও পড়ুন: ইলিশের স্যুপ ও নুডলস উদ্ভাবন

এ বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা দেবব্রত রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের কোম্পানি এখন শতভাগ উৎপাদনে রয়েছে। দোকানেও শতভাগ সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আরও সরবরাহ বাড়ানোর।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের পরিচালক শামিমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই মাসে নর স্যুপের চাহিদা বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের থেকে বেশ ভালো বাজার প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এনএইচ/জেডএইচ/এমএইচআর/এএসএম