ফিচার

অপার সম্ভাবনার ঋতু শরৎ

ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন শরৎকাল। ভাদ্র ও আশ্বিন দুই মাস মিলে শরৎকাল। শরতের সঙ্গে নিজের রূপের তুলনাও যেন বৃথা। বিলে ফোটা পদ্মের সকাল, ঘাসের মাঝে শিশিরের ফোঁটা, বনের ধার ঘেঁষে সাদা কাশফুলের দোলা, আকাশে উড়তে থাকা সাদা তুলোর মতো মেঘ, নদীর পাড়ের হাওয়া যে কারো মন ভুলিয়ে দেয়।

Advertisement

তাই তো কবি শরৎ নিয়ে বলেছিলেন, ‘সকাল হাসে দূর্বাঘাসে/ শিশির কণার ঝিলিকে/ শুভ্র কেশে শরৎ এসে/ রাঙিয়ে যায় লিলিকে।’ শুধু তা-ই নয়! আকাশে মেঘের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়ে চলা পাখির ঝাক, বাঁশবনে ডাহুকের ডাক, বিল-ঝিলের ডুবোজলে জড়িয়ে থাকা শাপলা, আঁধারের বুকে জোনাকির আলো, চাঁদের স্নিগ্ধ আলো কোনোটার কমতি নেই এ ঋতুর মাঝে! সবই আছে শরতে।

গ্রীষ্মের প্রখর রোদ আর বর্ষার বিরতিহীন বর্ষণের পর এ ঋতু জনজীবনে নিয়ে আসে স্বস্তি। প্রকৃতিতে ফুটে ওঠে স্নিগ্ধতা। মাঠে-ঘাটে তখন সবুজ ধানের হেলেদুলে কাটানো কৈশোর। এমন সবুজের সমারোহ দেখে কবিমন বলে ওঠে, ‘রূপের নাই শেষ তোমার/ আমার মাতৃভূমি/ ভালবাসি সবুজের সমারোহ/ সত্যিই অপরূপ তুমি।’ শরতের স্পর্শটাই এমন, যে স্পর্শে সাধারণের মনটাও আপ্লুত হয়ে ওঠে। অবসাদগ্রস্ত মনটাকে করে ফুরফুরে।

আরও পড়ুন: আচরণই পরিচয় বহন করে 

Advertisement

তবে শরতের মেজাজও বদলায়। কখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, কখনো গরম নিয়ে আসে এই ঋতু। কোনো কোনো জায়গায় এ ঋতু ‘তালপাকা ভাদ্র’ নামে পরিচিত। প্রবীণেরা ডাকেন ‘পচা ভাদ্দের’ বলে। ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে আবহাওয়া। শোনা যায় হেমন্তের পদধ্বনি। পদ্মায় নৌকা ভ্রমণকালে শরতের নীল আকাশ দেখে কবির মন গেয়ে ওঠে, ‘নীল আকাশে পুঞ্জ পুঞ্জ/ সাদা মেঘের কত কুঞ্জ/ অচেনা ঠিকানায় যায় ভেসে/ দূর হতে বহু দূরে।’

শরতে ফুলগাছেও জেগে ওঠে স্পন্দন। বিলের জলে তারার মতো ফুটে ওঠে লাল শাপলা। এছাড়া পদ্ম, শিউলি, বেলি, দোলনচাঁপা, বকুল, শালুক, জুঁই, কেয়া, কাশফুল, মাধবী, মল্লিকা, মালতীরা মন ভরায় প্রকৃতিপ্রেমীদের।

শরৎ উৎসবেও সেরা। কাশফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে দুর্গার আগমন ঘটে। চার দিনব্যাপী দুর্গার আরাধনা ও বিসর্জন শেষে আগমন ঘটে দেবী লক্ষ্মীর। কিছুদিন পরেই আতশবাজির ঝলকানি নিয়ে আসে দীপাবলি। হেমন্ত ফসলের ঋতু হলেও শরৎ হলো ফসল সম্ভাবনার। কৃষকেরা নবান্নের আশায় দিন গুনতে থাকেন।

আরও পড়ুন: পারিবারিক শিক্ষা কি ক্ষয়িষ্ণুতার পথে? 

Advertisement

যে কাশফুল শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে, সময়ের বিবর্তনে সেই কাশফুল আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তার রূপ দেখতে প্রতিনিয়ত ছুটছেন ভ্রমণপিপাসুরা। রাজধানীবাসী দিয়াবাড়ী, মিরপুর বেড়িবাঁধ, কেরানীগঞ্জ, আফতাবনগরসহ আশেপাশে থাকা কাশফুলের সঙ্গে শাড়ি, চুড়ি পরে ক্যামেরাবন্দি করছেন নিজের ছবি। অনুভব করছেন প্রকৃতির স্পর্শ। এ স্পর্শ বলে বোঝানোর মতো নয়, অনুভবের বিষয়। বলা যায়, শরৎ বাংলার সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু।

এসইউ/জিকেএস