আন্তর্জাতিক

বিশ্ব দরবারে ভারতের উত্থান, ভূ-রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক পাকিস্তান

ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্ব হারিয়েছে পাকিস্তান। যদিও দেশটির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত অবস্থান, বিপুল জনসংখ্যা, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, পারমাণবিক অস্ত্র ও সেমি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনীতি। সম্প্রতি এশিয়ার এই দেশটিতে দেখা দিচ্ছে একটার পর একটা সংকট। বিশ্বমঞ্চে খেলোয়াড়ের ভূমিকা হারানোর কাছাকাছি দেশটি।

Advertisement

ভূ-রাজনীতিতে পাকিস্তানের অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার পেছনে প্রাথমিকভাবে চারটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো ভূ-রাজনৈতিক স্রোতে পরিবর্তন, পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা, ভারতের উত্থান ও চীনের উদাসীনতা।

ভূ-রাজনৈতিক স্রোতে পরিবর্তন

এক দশক আগে ভারত, চীন, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অবস্থানের কারণে পাকিস্তান সুবিধা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তখন পাকিস্তান ছিল গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কারণ আফগানিস্তানে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পরই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে পাকিস্তান। তাছাড়া আফগানিস্তান হচ্ছে এখন পাকিস্তানের বিষফোড়া।

Advertisement

আরও পড়ুন>দিল্লিতে কোথায় থাকবেন বাইডেন-ট্রুডো-ঋষি সুনাক?

অনুরূপভাবে আঞ্চলিক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে ইরান। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান এখন অনেকটাই উপেক্ষিত।

অন্যদিকে এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। তাছাড়া সাগরপথে ভারত, চীন ও পশ্চিমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারছে আরবদেশগুলো। পাশাপাশি আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতা, ভারত মহাসাগরের উপকূলে গোয়াদর বন্দর উন্নয়নের সমস্যা, মধ্য এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যে একটি ওভারল্যান্ড লিঙ্ক হিসেবে অবস্থান থেকে সামান্য কিছুই পেতে পারে পাকিস্তান। তাছাড়া বেলুচিস্তান অঞ্চলের বিদ্রোহীদের কারণেও সুবিধা পাচ্ছে না দেশটি।

চীনের উদাসীনতা

Advertisement

চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যদিও দেশ দুটি নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নজর দিয়ে পাকিস্তান সব সময় বৈচিত্র্যতার সন্ধান করে।

এদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্কৃতি পশ্চিমাকেন্দ্রিক, চীনামুখী নয়। তাছাড়া চীনের ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ বর্তমানে তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ চীন এবং পূর্বমুখী। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিও এখন সেদিকে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে অন্য দেশের মতো ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে চীন। এই প্রকল্পকে গেম-চেঞ্জার মনে করা হলেও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক কিছু থমকে রয়েছে। তাছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের তুলনায় অন্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক চীনের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে পাকিস্তান চীনের কাছে কিছুটা গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্ত দীর্ঘ দ্বন্দ্ব পরিহার করে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য ভারতের সঙ্গে কাজ করতে পারে চীন।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা

অর্থনীতি ও জনসংখ্যাই সব সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়। কূটনীতি, অর্থনীতি ও সামরিক প্রভাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী হওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি দরকার তা হলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, যা পাকিস্তানের এই মুহূর্তে নেই। বৈশ্বিক মঞ্চে তুলে ধরার মতো দেশটির সরকারের কাছে কিছুই নেই। অন্যদিকে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বের কাছে বারবার ভারতের ভূমিকা তুলে ধরছেন।

আরও পড়ুন>জি-২০ নৈশভোজে যাচ্ছেন মমতা, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আশা

বিশেষ করে ২০২২ সালের এপ্রিলে অনস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুতের পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ে এবং দেখা দেয় অর্থনৈতিক সংকট। যা এখনো চলছে।

ভারতের উত্থান

বিশ্ব দরবারে গত কয়েক বছরে ভারতের যে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অতীতে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ভারতের বিষয়টি পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে। আগে নানা ইস্যুতে পশ্চিমাদের কাছে ভারত ও পাকিস্তান একই ধরনের গুরুত্ব পেতো। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। ভারতের অর্থনীতি এখন পাকিস্তানের চেয়ে আটগুণ বড়। তাছাড়া বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসংখ্যার দেশও এখন ভারত।

বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ভারত। জি-২০ ও ব্রিকসের মতো সংস্থায় রয়েছে দেশটির প্রভাব। ভারত এখন আর চীন বা পাকিস্তান ইস্যুর মধ্যে সীমবদ্ধ নয়। অন্যদিকে অর্থনীতি ও সামরিকভাবে খুব সামান্যই এগোতে পেরেছে পাকিস্তান।

লেখক: অখিলেশ পিল্লালামারি

এমএসএম