দেশজুড়ে

খাবারের জন্য বসতবাড়ি-ফল বাগানে হনুমানের হানা

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান এখন খাবারের জন্য হানা দিচ্ছে আশপাশের এলাকাগুলোতেও। নিজ আবাসস্থল ছেড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটছে খাবারের সন্ধানে। খাবারের জন্য ধর্না দিচ্ছে বাসাবাড়িতে। একই সঙ্গে হানা দিচ্ছে কৃষকের ফলের বাগানে।

Advertisement

জানা যায়, যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, হাসপাতাল ও অফিসপাড়া কেন্দ্রিক এলাকা জুড়ে এই কালোমুখো হনুমানের বসবাস। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই হনুমানের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়। তবে প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাবার সংকটে কেশবপুরের আবাস ছেড়ে মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে এই কালোমুখো হনুমান।

স্থানীয়রা জানান, একযুগ ধরে মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী, দুর্গাপুর এবং মণিরামপুর উপজেলা সীমান্তবর্তী ঈমাননগর গ্রামের বাঁশঝাড় ও বড় বড় গাছের মগডালে এই কালোমুখো হনুমান আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। এখানেও তারা বংশবিস্তার করে চলেছে।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনে সাঁতরে নদী পার ৩ বাঘের, ভিডিও ভাইরাল

Advertisement

দু-তিন বছর ধরে হনুমান দলবেঁধে মণিরামপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে হানা দিচ্ছে। প্রথম দিকে এলাকার লোকজন হনুমানের দল আসলে সাদরে গ্রহণ করে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিতো। কিন্তু প্রতিনিয়ত হনুমানের উপদ্রব বাড়ায় সাধারণ মানুষের কাছেও তা অসহ্য হয়ে উঠেছে। তবে এখনো অনেকেই হনুমানের দলকে আদর-যত্ন করে খাওয়ায়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন শিক্ষকের বাড়িতে হনুমানের দলকে খেতে দেওয়া দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে।

স্কুল শিক্ষক বিপ্লব কুমার জানান, তার বসতবাড়িতে প্রায়ই হনুমানের দল আসে। তিনি খেতেও দেন। গত কয়েক মাস ধরে হনুমানের দল বাড়িতে আসলেই খেতে দেওয়া হয়। এ লোভে সপ্তাহে দুই-তিনদিন হনুমানের দল তার বাড়িতে আসে। তার দাবি বিরল প্রজাতির এ হনুমান রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের আরও নজর দেওয়া দরকার।

এদিকে, এই হনুমানের দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার না পেয়ে গ্রামের মানুষের ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। মূলত এরা কৃষকের বাতাবি লেবু, আমড়া, পেয়ারা, ছফেদা, কলাসহ ফল ও সবজি বাগানে হানা দিয়ে ফল খাওয়ার পাশাপাশি বাগানও নষ্ট করছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে ক্ষেত ও বাগান পাহারা দিচ্ছেন।

মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের মাল্টাচাষী আব্দুল করিম জানান, তার কয়েক বিঘা জমিতে মাল্টা ও কমলা লেবুর বাগান রয়েছে। হনুমানের হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি বাগান পাহারা দেন। তার মতো গ্রামের অনেকেই নিজেদের ফল ও সবজি রক্ষার্থে পাহারা দেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: এলাকাবাসীর নজর কাড়ছে লোকালয়ে আসা ২ বানর

স্থানীয়দের মতে, কালোমুখো হনুমানদের জন্য বরাদ্দ খাবার কম হওয়ায় এবং বংশবৃদ্ধি করে হনুমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এজন্যই তারা লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এ উপজেলার বন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবদুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, অভয়ারণ্যে বর্তমানে হনুমানের জন্য যে খাদ্য বরাদ্দ রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় হনুমানের দল লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।

মিলন রহমান/জেএস/এএসএম