দেশজুড়ে

তিন কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যায় ফজলুল

জন্ম থেকেই ফজলুল হকের পা দুটি অকেজো। তারপরও থেমে নেই তার পথচলা। এ অকেজো পা নিয়েই হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে গিয়ে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পাস করেছে সে। এখন পড়ছে দ্বাদশ শ্রেণিতে। তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করা।

Advertisement

ফজলুল হক ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়ার ইছাইল নতুনবাজার ফরাজিবাড়ি এলাকার গাছকাটা শ্রমিক লাল মিয়ার ছেলে। তারা পাঁচ ভাই ও এক বোন। সবার বড় ফজলুল হক। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ভাই হোটেলে কাজ করেন। অপর তিন ভাই ছোট। তারা বাড়িতেই থাকেন।

ফজলুল হকের বাবা লাল মিয়া বলেন, ‘জন্মের সময় তার পা দুটো সামনের দিকে বাঁকা ছিল। ভেবেছিলাম কয়েক মাস গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বয়স যখন তিন থেকে চার মাস হয় তখন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করি। তখন চিকিৎসক বলেছিলেন, তার পা সোজা হবে না। তারপর ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসক দেখানো হয়। কিন্তু, তারাও একই কথা বলেছেন। এরপর এভাবেই সে বেড়ে উঠেছে।’

তবে শৈশব থেকেই ফজলুল হকের লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল বলে জানান লাল মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাকে তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর সে বিজ্ঞান শাখায় পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাতে পারিনি। অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর থেকে টিউশনি করে সে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছে। পরিবার থেকেও কিছুটা সহায়তা করা হচ্ছে।’

Advertisement

‘সে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এখন নিয়মিত কলেজে যায়। বাড়ি থেকে কলেজ প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। যেদিন গাড়ি ভাড়া থাকে সেদিন অটোরিকশায় করে সে কলেজে যায়। কলেজের সামনে অটোরিকশা থেকে নেমে হাতে স্যান্ডেল পরে হামাগুড়ি দিয়ে যায়। আর যেদিন গাড়ি ভাড়ার টাকা থাকে না, সেদিন হামাগুড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে যেতে হয় আমার ছেলেকে’, যোগ করেন লাল মিয়া।

সম্প্রতি সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাতের তালুতে স্যান্ডেল পরে হামাগুড়ি দিয়ে কলেজে যাচ্ছে অদম্য ফজলুল হক। ক্লান্ত হয়ে পড়লে কিছুক্ষণ জিড়িয়ে আবারও ছুটছে কলেজের দিকে। এভাবেই প্রতিদিন কলেজে যাচ্ছে কিশোর ফজলুল।

ফজলুল হক জাগো নিউজকে বলে, ‘আমার পরিবারের পক্ষে পড়াশোনা চালানো সম্ভব না। তাই আমি টিউশনি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাই। কিছু টাকা পরিবারকে দেই। কষ্ট করে হলেও আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে চাই।’

কথা হয় ফজলুল হকের মা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ। আমরা তাকে লেখাপড়া করাতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

Advertisement

হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অর্থনীতির সিনিয়র প্রভাষক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ফজলুল যে দূর থেকে আসে সেখান থেকে কোনো সুস্থ মানুষও এখানে পড়তে আসবে না। তার ইচ্ছা আছে বলেই এখানে সে কষ্ট করে পড়তে আসে।’

হলি-চাইল্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল হোসাইন বলেন, আমরা ফজলুল হকের কাছ থেকে বেতন ও পরীক্ষার ফি নিই না। এখান থেকে সে যখন বের হবে তখন ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে প্রতিবন্ধী কোটা থাকে সেটার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) পুলক কান্তি চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/জিকেএস