আন্তর্জাতিক

‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে ন্যাটোকে যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টা করছে ইউক্রেন?

ইউক্রেনের ইজমাইল বন্দরে হামলা চালানোর সময় রাশিয়ার একাধিক ড্রোন ন্যাটো সদস্য রোমানিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছে রোমানিয়ান কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা রোমানিয়ার জন্য কোনো ধরনের হুমকি তৈরি করেনি।

Advertisement

ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকের এক পোস্টে বলেছেন, ইউক্রেনের স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিসের তথ্যমতে, রাতে রুশ ‘শাহেদ’ ড্রোনগুলো রোমানিয়ার ভূখণ্ডে পড়ে বিস্ফোরিত হয়েছে। দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত ইজমাইল বন্দরে রুশ হামলার সময় এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

ইউক্রেনীয় মুখপাত্র তার পোস্টে একটি ছবিও শেয়ার করেছেন। এতে পানির কাছে উজ্জ্বল ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পাওয়া যায়। তবে স্বাধীনভাবে এই ছবি ও ইউক্রেনীয় মুখপাত্রের দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইউক্রেনীয় স্টেট বর্ডার গার্ড সার্ভিসের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, নিকোলেঙ্কোর বক্তব্য ‘নির্ভরযোগ্য’। ঘটনাস্থলে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আন্দ্রি ডেমচেঙ্কো বলেছেন, রাতভর রুশ হামলার সময় আমরা ইজমাইল বন্দরের কাছে রোমানিয়ার ভূখণ্ডে দুটি বিস্ফোরণ লক্ষ্য করেছি।

Advertisement

তবে রোমানিয়ার ভূখণ্ডে রুশ অস্ত্র আঘাত হানার দাবি অস্বীকার করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, রুশ ড্রোন রোমানিয়ার ভূখণ্ডে পড়ার দাবি সরাসরি অস্বীকার করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। (ইউক্রেনে) রাশিয়ার আক্রমণের মাধ্যমগুলো রোমানিয়ার ভূখণ্ড বা জলসীমায় সরাসরি কোনো সামরিক হুমকি তৈরি করেনি।

যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয়ে অবগত বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে তারাও রোমানিয়ান সরকারের বক্তব্য উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পেন্টাগন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। তারপর থেকে ইউক্রেনের সীমানার মধ্যেই চলছে তাদের মধ্যকার মূল লড়াই। তবে এই সংঘাত একাধিকবার ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ঢুকে পড়ার দাবি করেছে কিয়েভ। তবে প্রায় প্রতিবারই সেই দাবি অস্বীকার করেছে ন্যাটো মিত্ররা।

২০২২ সালের মার্চ মাসে সোভিয়েত-নির্মিত একটি তুপোলেভ ড্রোন ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে বিধ্বস্ত হয়। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনাটি ঘটে গত নভেম্বরে। ওইদিন ইউক্রেনীয় সীমান্তের কাছাকাছি পোল্যান্ডের একটি গ্রামে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে দুজন নিহত হন।

Advertisement

ইউক্রেনের দাবি, দুটি ঘটনার পেছনেই রাশিয়ার হাত ছিল। কিন্তু সেই দাবি নাকচ করে দেয় পশ্চিমা মিত্ররা। বরং তারা জানায়, অস্ত্রগুলো ইউক্রেনেরই ছিল এবং সেগুলো হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে মিত্র দেশগুলোতে আঘাত হেনেছিল।

ন্যাটোর নিয়ম অনুসারে, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কোনো একটি আক্রমণের শিকার হলে সেটি সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে পশ্চিমা এই সামরিক জোট।

ইউক্রেনের সংসদ সদস্য ওকসানা সাভচুক স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই হয়তো রোমানিয়ান সরকার তার ভূখণ্ডে রুশ ড্রোন বিস্ফোরণের ঘটনা অস্বীকার করেছে।

সূত্র: রয়টার্স, এএফপি, এনডিটিভিকেএএ/