ধর্ম

পানি আল্লাহর অপার নিয়ামাত

পানির আল্লাহর নিয়ামাতের মধ্যে অন্যতম। পানি ছাড়া মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব। আল্লাহ তাআলা পানিকে মানুষের জন্য নিয়ামাত হিসেবে দান করেছেন। কেননা পৃথিবীর সকল প্রাণের উৎস পানি এবং সবাই পানির উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা পানিকে শুধুমাত্র মানুষের পান করার চাহিদা মিটানোর জন্যই তৈরি করেননি। পানিকে করেছেন সৃষ্টির বিভিন্ন কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।আজ বিশ্ব পানি দিবস। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক অধিবেশনে একটি বিশেষ দিনকে সুস্বাদু পানি দিবস হিসেবে পালন করার কথা সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৯৩ সালের ২২ শে মার্চকে প্রথম আন্তর্জাতিক পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই প্রতি বছর সুস্বাদু পানির উপর এক একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ২২ শে মার্চ আন্তর্জাতিক পানি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।গবেষণায় দেখা যায়...পৃথিবীর শতকরা ৭১% পানি হিসেবে থাকলেও এর মাত্র ৩% খাবার যোগ্য। যার বেশিরভাগই এন্টার্কটিকা ও গ্রীনল্যান্ডে বরফ হিসেবে জমা আছে অথবা মাটির নীচে। পৃথিবীর মোট পানির মাত্র ০.০১ শতাংশ মানুষের ব্যবহারোপযোগী। তাও আবার পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। আধুনিক বিশ্বে যখন বিজ্ঞানের জয় জয়কার সেখানে প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশী মানুষের জন্য নাই নিরপদ পানির ব্যবস্থা, তাই প্রতি বছর শুধু নিরাপদ পানির অভাবে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।মাখলুক সৃষ্টিতে...আল্লাহ তাআলা মাখলুক সৃষ্টিতে পানি ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন পানি হতে, ওদের কতেক পেটে ভর দিয়ে চলে (সাপ), কতেক দুই পায়ে চলে (মানুষ) এবং কতেক চলে চার পায়ে (জন্তু-জানোয়ার) আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। (সুরা নুর : আয়াত ৪৫)আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম, এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩০)ফসল উৎপাদনে...আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবিকা তথা ফলমূল তৈরিতে পরিমাণ মতো পানি দান করে থাকেন। যা ছাড়া কোনো ফলমূল উৎপন্ন হতো না। আল্লাহ বলেন, ‘যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২২)আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মতো, অতপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করে থাকি। অতপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্য এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১৮-১৯)পিপাসা নিবারণে...আল্লাহ মানুষের পিপাসা নিবারণের জন্য সুস্বাদু পানির ব্যবস্থা করেছেন। যা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন? না আমি বর্ষন করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৮-৭০)ইবাদাত বন্দেগিতে...পানি স্বভাবত পবিত্র। পবিত্র বিধায় তা ভক্ষণ যোগ্য। পানি পবিত্র বিধায় অন্যকেও পবিত্র করে তোলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে পানি বর্ষণ করি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৮)পরিশেষে…পানির গুরুত্ব এত অধিক যে, দুনিয়ার পানি বিশেষজ্ঞরা এর গুরুত্ব বুঝাতে বিশ্ব পানি দিবস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ গুরুত্বপূর্ণ স্লোগানগুলো দিয়ে আসছে- ১৯৯৪ : পানিসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সবার দ্বায়িত্ব; ১৯৯৫: নারী ও পানি; ১৯৯৬: তৃষ্ণার্ত শহরের জন্য পানি; ১৯৯৭: বিশ্বের পানি : আসলেই কি যথেষ্ট?; ১৯৯৮: ভূগর্ভস্থ পানি : এক অদৃশ্য সম্পদ; ১৯৯৯: সবাই আমরা ভাটির দেশের অধিবাসী; ২০০০: একবিংশ শতাব্দীর জন্য পানি; ২০০১: সুস্বাস্থের জন্য পানি; ২০০২: উন্নয়নের জন্য পানি; ২০০৩: ভবিষ্যতের জন্য পানি; ২০০৪: পানি ও দূর্যোগ; ২০০৫: জীবনের জন্য পানি; ২০০৬: পানি ও জলবায়ু; ২০০৭: পানির আকাল নিরসন; ২০০৮: পয়নিষ্কাশন; ২০০৯: আন্তসীমান্ত পানি; ২০১০: সুস্থ বিশ্বের জন্য নিরাপদ পানি; ২০১১: নগরের জন্য পানি; ২০১২: পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা; ২০১৩ : পানি সহযোগিতা; ২০১৪ : পানি ও শক্তি; ২০১৫ : পানি ও টেকসই উন্নয়ন এবং   ২০১৬ : পানি এবং জীবিকা।সুতরাং পানি যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত অপার নিয়ামাত। তাই পানির অপচয় ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো সকল কর্ম পরিহার করি। সুস্বাদু পানির সংরক্ষণে এগিয়ে আসি। পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস

Advertisement