>> চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমে জিআই ট্যাগ নেই>> একই দামে বিক্রি হচ্ছে এ জেলার আম
Advertisement
এখন পর্যন্ত চারটি আমে জিআই সনদ (ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি) পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে আমচাষিরা বলছেন, এ স্বীকৃতি কোনো কাজেই আসছে না তাদের। নেই কোনো ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম। অন্য জেলার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই সনদপ্রাপ্ত বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশজুড়ে একই দামে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার চাষিরা।
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর শরৎনগর গ্রামের আমচাষি আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের জেলার চারটি আম জিআই সনদ পেয়েছে। কিন্তু আমরা তার কোনো সুফল পাচ্ছি না। কারণ আমাদের আমের কোনো ব্র্যান্ডিং নেই। বাজারে বিক্রির সময় আমাদের নামে স্টিকারও থাকে না। তাই আমাদের আম আলাদা করে বাজারে বিক্রির সুযোগ নেই। এজন্য ভালো দামও পাচ্ছি না।’
আমাদের জেলার চারটি আম জিআই সনদ পেয়েছে। কিন্তু আমরা তার কোনো সুফল পাচ্ছি না। কারণ আমাদের আমের কোনো ব্র্যান্ডিং নেই। বাজারে বিক্রির সময় আমাদের নামে স্টিকারও থাকে না। তাই আমাদের আম আলাদা করে বাজারে বিক্রির সুযোগ নেই। এজন্য ভালো দামও পাচ্ছি না।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমি চাই এ জেলার জিআই সনদপ্রাপ্ত আমগুলোকে ব্র্যান্ডিং করা হোক। আমের ওপর জিআই সনদের স্টিকার বসিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হোক। এতে আমরা লাভবান হবো। বেশি দামে বিক্রি হবে আমাদের জেলার আম।’
আরও পড়ুন: জিআই স্বীকৃতি পেলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি অন্য জেলার আমের সঙ্গেই আমাদের আম বিক্রি হচ্ছে। এটি মোটেও কাম্য নয়। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের আলাদা কদর রয়েছে। কিন্তু সেই কদর হিসেবে আমরা দাম পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, আমাদের নামে কোনো ট্যাগও ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাহলে জিআই স্বীকৃতি পেয়ে লাভটা কী?
Advertisement
এখন পর্যন্ত জিআই স্বীকৃতি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে; কোনো কাজে আসছে না। আমরা এখনো জিআই স্বীকৃতপ্রাপ্ত আমগুলোতে জিআই ট্যাগ লাগাতে পারিনি। এতে এখন পর্যন্ত বাজারে অন্য জেলার আমের সঙ্গে এ জেলার আমের কোনো পার্থক্য নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জিআই স্বীকৃতি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে; কোনো কাজে আসছে না। আমরা এখনো জিআই স্বীকৃতপ্রাপ্ত আমগুলোতে জিআই ট্যাগ লাগাতে পারিনি। এতে এখন পর্যন্ত বাজারে অন্য জেলার আমের সঙ্গে এ জেলার আমের কোনো পার্থক্য নেই।’
আরও পড়ুন: জিআই স্বীকৃতির বছরে দাম মিলছে না আশ্বিনার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা মূলত গবেষণা নিয়ে কাজ করি। তবে জেলার আমের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখন পর্যন্ত চারটি আমের জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি প্রাপ্তি ছিল। কারণ এ জেলাকে ‘আমের জনক’ বলা হয়। আমরা আশা করছি, আরও ১০-১২টি আমের জিআই স্বীকৃতি পাবে এ জেলা।
আমি কয়েকদিন আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি অন্য জেলার আমের সঙ্গেই আমাদের আম বিক্রি হচ্ছে। এটি মোটেও কাম্য নয়। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের আলাদা কদর রয়েছে। কিন্তু সেই কদর হিসেবে আমরা দাম পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, জিআই স্বীকৃতির কার্যক্রম শুরু হয়নি, এটা বলা যাবে না। কারণ এটি নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। শিগগির চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমে জিআই ট্যাগ বসিয়ে বাজারে বিক্রি হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। রপ্তানিকারকদের আমবাগান দেখানো হচ্ছে। আগামীতে বিদেশে আরও বেশি কীভাবে আম পাঠানো যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ জেলায় ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হবে। এতে বিদেশে আম রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হবে।
আরও পড়ুন: জিআই স্বীকৃতি পেল আরও চার পণ্য
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। আপনি রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’
তবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কী কারণে তারা জিআই ট্যাগ ব্যবহার করতে পারছেন না আমার জানা নেই। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা অবশ্যই জিআই ট্যাগ ব্যবহার করে আম বিক্রি করতে পারবেন। এরপরও চাষিদের কোনো সমস্য হলে আমাদের এখানে একজন স্পেশালিস্ট আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সমস্যার সমাধান হবে।’
এরআগে ২০১৯ সালে ক্ষীরশাপাতি আমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ২০২২ সালে ফজলি আমে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ উভয় জেলা জিআই স্বীকৃতি পায়। চলতি বছর ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমের জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে এ জেলা।
এসআর/এসএইচএস/জেআইএম