জাতীয়

জমি দখলে থাকলেই মালিক নয়, থাকতে হবে দলিল

দখলে থাকলেই মালিক নয়, দলিলসহ জমির প্রয়োজনীয় দস্তাবেজ থাকতে হবে, এমন বিধান করতে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল–২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।

Advertisement

অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশ বিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তরে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইনটি করা হবে।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: গ্রামের সহজ-সরল মানুষের জমি দখল, প্রতিবাদ করলেই মামলা

Advertisement

বিলে বলা হয়েছে, ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনো ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ কারো কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণ সংবলিত কোনো দলিলে সই করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনো অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই। এছাড়া প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।

আরও পড়ুন: সরকারি জমি দখল করে ঘর বানালেন বিআরটিএর কর্মকর্তা

বিলে আরও বলা হয়েছে, সবশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনো মালিকানা বা দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। কোনো ব্যক্তির নামে স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টিন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি ওই জমি বিক্রি, দান বা হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল নিবন্ধন করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া আবাদযোগ্য জমির উপরি–স্তর কাটলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারা ও অর্থদণ্ড।

Advertisement

বিলে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনে বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচনা দিলে মূল অপরাধীর সমান দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আরও পড়ুন: রামদা ঠেকিয়ে জমি দখল করলেন যুবলীগ নেতা

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগ দখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণে এই আইন করা হচ্ছে। নাগরিকদের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমিবিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্র প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবধান প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বিবৃতিতে মন্ত্রী আরও বলেন, বেআইনিভাবে ভূমি দখল, স্থাপনা বা প্রতিবন্ধকতা এছাড়া অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং উক্ত ভূমিকে এর আগের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ এবং যথাসময়ে জনগণের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠপর্যায়ের মতামত গ্রহণসহ অংশীজনের মতামত গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে প্রস্তাবিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

আইএইচআর/জেডএইচ/এমএস