আন্তর্জাতিক

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে রাশিয়ায় প্রবেশ করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা?

রাশিয়ার অভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনের সেনারা প্রবেশে করেছে। এমনটাই দাবি করেছেন ইউক্রেনীয় জেনারেলরা। চলতি গ্রীষ্মের শুরুতেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেন। যদিও রাশিয়ার দখল থেকে তারা যেসব এলাকা উদ্ধার করেছে তার আয়তন খুব বেশি না। তবে সেসব এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। খবর বিবিসির।

Advertisement

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ইউরি শাক জানিয়েছেন, তাদের সৈন্যরা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করেছেন। তিনি বলেন, এটা সত্যি। অল্প অল্প করে হলেও আমরা সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন: পুতিন-এরদোয়ান বৈঠকের আগেই ইউক্রেন বন্দরে রাশিয়ার হামলা

দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্বরত শীর্ষ জেনারেলদের একজন ওলেকসান্ডার তার্নাভাস্কি। তিনি ব্রিটেনভিত্তিক দ্য অবজারভার পত্রিকাকে বলেন, আমরা এখন রাশিয়ার প্রথম আর দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের ভেতরে আছি।

Advertisement

তার এ বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবির কথাতেও। শুক্রবার ওয়াশিংটনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনের সৈন্যরা দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বেশ সফলতা পেয়েছেন। দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার গড়ে তোলা দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষার বিরুদ্ধে কিয়েভ বাহিনী যে লড়াই চালাচ্ছে তাতে তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের।

ইউক্রেনের শুরু করা পাল্টা আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৫৬ মাইল দূরের একটি ছোট গ্রামের আশেপাশের এলাকা।

এক সপ্তাহ আগে ওই গ্রাম পুনরুদ্ধার করার পর পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছিল ইউক্রেনের সেনারা। এখন তারা সেখানকার নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে যেন রাশিয়ার গোলাগুলির মধ্যে পড়তে না হয় এবং আরও বেশি সৈন্য ও সাঁজোয়া যান চলাচল করতে পারে।

সেটা করা সম্ভব হলে ইউক্রেনের সৈন্যরা দ্বিতীয় আর তৃতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের ভেতরে অবস্থান নিতে পারবে। তবে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করার মতো সেটা এত সহজও হবে না।

Advertisement

ইউক্রেনের আরও কয়েকটি এলাকাতেও লড়াই চলছে। যদিও সেসব এলাকায় অগ্রগতির হার খুবই কম। কারণ এসব যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বসানো মাইন, ট্যাঙ্ক বাহিনী, পরিখার মতো নানা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

যুদ্ধবিমানের সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার গোলার মুখে ইউক্রেনের ছোট ছোট ইউনিটগুলো এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলার ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এতে করে আরও বড় ধরনের হামলা চালানো সম্ভব হবে।

ইউরি শাক বলেন, যখন এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব হবে তখন আমাদের বাকি বাহিনী দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। তবে ইউক্রেনের এসব দাবির গুরুত্ব কতটা তা যাচাই করা বেশ কঠিন। কারণ দেশটির কর্মকর্তারা এসব হামলার বিস্তারিত জানাতে রাজি নন। তারা একটা ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখতে চান যেন, কিয়েভের উদ্দেশ্য রুশ সেনারা বুঝতে না পারে।

স্পর্শকাতর কোন তথ্যই জানাতে চান না কিয়েভের কর্মকর্তারা। ইউক্রেনের একটি স্বেচ্ছাসেবী ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তার বাহিনীর সদস্যরা গত ২৬ আগস্ট রাশিয়ার প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করেছে।

তার বাহিনীর সদস্যরা এখন আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। ওই কমান্ডার বলেন, আক্ষরিক অর্থেই আমরা জাপোরিঝিয়া অঞ্চল ধরে সাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

আরও পড়ুন: যুদ্ধের মধ্যেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বদলালেন জেলেনস্কি

তিনি বলেন, আমি এখনি তাড়াহুড়ো করতে চাই না। তবে আমরা এবং নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত বিজয়ের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করছি।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের এই অভিযানের পুরোপুরি চিত্র এখনো পাওয়া না গেলেও তাতে ক্রেমলিন যে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে সেটা পরিষ্কার। অন্যান্য এলাকা থেকে এলিট বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য মোতায়েন করতে শুরু করেছে রাশিয়া। বিশেষ করে প্রধান সড়ক এবং রেল সড়কের নিরাপত্তায় তাদের মোতায়েন করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্টাডি অব ওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসের পর তৃতীয় দফায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আবারো এ ধরনের সেনা মোতায়েনের ঘটনায় এটা বোঝা যাচ্ছে যে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষা করা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ বাড়ছে। গত ০১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা একটি বিশ্লেষণে এমন তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।

ইউক্রেনের এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, রাশিয়ার বাহিনীগুলোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা তাড়িয়ে দেওয়া, যাতে তারা ক্লান্ত হয়ে ওঠে এবং রিজার্ভ বাহিনীকে তলব করতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে রুশ বাহিনীর দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

আরও পড়ুন: যুদ্ধে ইউক্রেনের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে: যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে কিয়েভভিত্তিক এমন একটি গবেষণা সংস্থা ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন সেন্টার। এই সংস্থার কর্মকর্তা সের্হি কুযান বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর পরবর্তী কাজ হবে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করা। সেটা না করা পর্যন্ত আরও গভীরে যেতে পারবে না আমাদের বাহিনী।

তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়াকে হটিয়ে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে আজোভ সাগরের মধ্যবর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এর ফলে ক্রিমিয়ার সঙ্গে মস্কোর ভূ-স্থলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কিন্তু সেটা করা না গেলেও ওই এলাকায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থা তারা ভেঙ্গে দিতে চায়। কিন্তু সেটা করতে গেলেও রাশিয়ার পাল্টা হামলার মুখেও পড়তে হবে তাদের। সামনে আরও কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে বলেও উল্লেখ করেন কুযান।

টিটিএন